0
  Login
অনলাইন বিজনেসে সফল হতে হলে যে পাঁচটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে

অনলাইন বিজনেসে সফল হতে হলে যে পাঁচটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে

২০২১ সালের দিকে এসে আপনার অনলাইন বিজনেসকে সফল করে তুলতে হলে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে।

আপনার প্রতিযোগিরা ই-কমার্স বিজনেসে এক নম্বর স্থান দখলের জন্য ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছে তার বিপরীতে আপনি কি করছেন? নিজেকে প্রশ্ন করুন?

৮০% ই-কমার্স বিজনেস সফল হতে পারে না। কারণ তারা জানে না যে তারা কি করছে কেন, করছে এবং তারা তাদের কাস্টমারদের এটি দারুণ অভিজ্ঞতা দিতে ব্যর্থ।

আপনার ই-কমার্স বিজনেসটিকে সফল করে তুলতে হলে নিচে উল্লেখ করা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনাকে নজর দিতে হবে।

 

১. ব্র্যান্ড হোক বিজনেসের উদ্দেশ্য

আপনার ব্র্যান্ড হচ্ছে আপনার বিজনেসের পরিচয় তাই আপনার ব্র্যান্ড ঠিকই প্রকাশ করছে সে বিষয়ে আপনাকে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।

যখন mercedes-benz গাড়িটির কথা বলা হয় তখন আপনার মাথায় কি আসে?

এটি একটি লাক্সারি কার এবং অনেক ব্যয়বহুল। যখন টয়োটা  গাড়ির কথা বলা হয় তখন আপনার মাথায় কি আসে? এটি মধ্যম দামি গাড়ি এবং মধ্যম আয়ের মানুষদের জন্য।

কেউ যখন mercedes-benz গাড়িটা কিনছে তখন সে শুধু একটি গাড়ি কিনছে না।  সে তার সাথে মর্যাদা কিনছে। তাই আপনি যখন একটি ব্র্যান্ড তৈরি করছেন তার অর্থ আপনি একটি গোষ্ঠীর মানুষকে আকৃষ্ট করছেন।

লো বাজেট গাড়িতে সমস্ত ফিচার পরিপূর্ণভাবে থাকেনা। যদি আপনি পাওয়ার চান তবে আরাম পাবেন না, যদি আরাম চান তাহলে কন্ট্রোলিং পাবেন না, যদি কন্ট্রোলিং চান তাহলে আউটলুক পাবেন না।

কিন্তু আপনি যখন একটি লাক্সারি কার কিনবেন সেখানে সমস্ত ফিচারের সাথে কন্ট্রোল, কমফোর্ট, আউটলুক, পাওয়ার একসাথে পাবেন।

mercedes-benz শব্দটি পরিচিত হচ্ছে তার উপযোগিতা দ্বারা। যা চাহিদার সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে।

একজন মানুষ যখন প্রথমবার সেই গাড়িটি ব্যবহার করবে সে তার অনুভূতি কখনো ভুলবে না এবং প্রথম অনুভূতি তারা তাকে যদি আবিষ্ট করতে সক্ষম হন তবে সে আপনার প্রতি লয়াল থাকবে।

ব্র্যান্ড তৈরির ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ইউনিক সেলিং প্রপোজিশন। বিষয়টি কি?

আপনার ব্র্যান্ডটি কেন অন্যদের থেকে আলাদা সেটিই মূলত ইউনিক সেলিং প্রপোজিশন।

বাজারে মোবাইল ব্র্যান্ডের মধ্যে কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ড যেমন স্যামসাং,  হুয়াওয়ে,  অপ্পো, রিয়েল মি ইত্যাদি।  এখন আমি যদি অপ্পো মোবাইলটির নাম উচ্চারণ করি, তবে মাথার মধ্যে আসবে ক্যামেরা ফোন বা সেলফি এক্সপার্ট।

বাজারের সবগুলো ফোনের কাজ একই, কথা বলা যায়, ছবি তোলা যায়, ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায় কিন্তু এর মধ্যে থেকেও অপ্পো নিজেকে আলাদা করতে সক্ষম হয়েছে।

কারণ সবার মোবাইলে ছবি তোলা গেলেও তারা দাবি করে তাদের মোবাইলে সবথেকে চমৎকার সেলফি তোলা সম্ভব।

আপনার বিজনেসকে প্রতিযোগিতা থেকে যতবেশি আলাদা করে তুলতে পারবেন,  ততবেশি আপনি সবার কাছে সমাদৃত হবে।  আপনাকে মনে রাখবে এবং পরবর্তী কেনার সময় কাস্টমার আপনার কথা চিন্তা করবে।

এক্ষেত্রে কাস্টমার রিভিউ খুব গুরুত্বপূর্ণ।  দেখা গেছে কাস্টমার যখন কোনো একটি প্রোডাক্ট অনলাইনে কেনার পর খুশি হয় সে পরবর্তী পাঁচ জনকে পরামর্শ দেয় অনলাইনে কেনাকাটার জন্য।

কিন্তু কেউ যখন প্রতারিত হয় তখন সে অগণিত মানুষকে অনলাইনে কেনাকাটা না করতে উপদেশ দিতে থাকে।

তাই আপনার ব্র্যান্ডটির মূল উদ্দেশ্য হতে হবে আপনি যেটি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন সেটিকে বাস্তবায়ন করুন।

খেয়াল করবেন অপ্পো ফোনে যদি চার্জ কম থাকে কিন্তু তারা যেহেতু ক্যামেরা ফোন বলছে আর সেটি যদি নিশ্চিত হয়, তবে আপনি নিঃসন্দেহে বাকি দুর্বলতাগুলোকে মেনে নিবেন।

আর এজন্যই শুধু প্রোডাক্ট নয় ব্র্যান্ড হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যেখানে আপনি সবার থেকে আলাদা ভাবে নিজেকে উপস্থাপনের মাধ্যমে বাজারে একটি অনন্য বিজনেস হিসেবে পরিচিতি লাভ করবেন এবং কাস্টমার আপনাকে আপনার প্রতিষ্ঠানে গ্রহণ করবে।

আর সেটি না করে শুধুমাত্র প্রোডাক্টের কোয়ালিটি দিয়ে বাজার দখলের চেষ্টা করেন তবে এর ফলাফল সবসময় সুখকর হয় না।

বাজারে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে গেছে শুধুমাত্র তারা প্রতিযোগীদের থেকে নিজেকে আলাদা করতে সক্ষম হয়নি যদিও তাদের প্রোডাক্ট কোয়ালিটি অসাধারণ ছিল।

১৯৯০ সালের পরবর্তী সময়ে সিটিজেন, নিপ্পন টেলিভিশন ব্র্যান্ড বাংলাদেশ পপুলার হতে থাকে। কারণ তাদের প্রোডাক্টের কোয়ালিটি ভালো ছিল আর সে সময় সনি টেলিভিশন ছিল সবার রাজা । যারা ৯০ দশকের জেনারেশন ছিল তার একটু খেয়াল করলেই দেখবেন প্রতিটি বাড়িতেই সেসময় সিটিজেন, নিপ্পন এবং সনি টিভির প্রচন্ড দাপট ছিল। সনি টিভি দামি তাই সবাই এটি কিনতে পারতো না।

তবুও সিটিজেন বা নিপ্পন টেলিভিশন তাদের মার্কেটে অবস্থান তৈরি করতে পারে নাই কারণ তারা কোয়ালিটিতে গুরুত্ব দিলেও মার্কেটিংয়ে যথেষ্ট দুর্বল ছিল।

তাই প্রোডাক্টের পাশাপাশি আপনার মূল উদ্দেশ্য হোক ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করানো যেন মানুষের কাছে আপনার মূল্যায়ন এবং চাহিদা দুটোই চলমান থাকে।

 

২. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন

অনেকেই ই-কমার্স ওয়েবসাইট তৈরি করার পর পরেই বলেন আমার ওয়েবসাইটটি গুগলে সবার উপরে নিয়ে আসেন। বিষয়টিকে তারা খুব সহজেই বলে ফেলেন কিন্তু আপনি কি জানেন সারাবিশ্বে 24 মিলিয়নেরও বেশি ই-কমার্স ওয়েবসাইট রয়েছে এবং এটি প্রতিদিন বেড়েই চলেছে।

এরা সবাই গুগলের প্রথম পেজে আসতে চায় কিন্তু গুগলের প্রথম পেজে সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ১০০ টির বেশি রেজাল্ট আনা সম্ভব নয় তাহলে একবার চিন্তা করুন, গুগলের সার্চে প্রথমে আসতে হলে আপনাকে কতটা পরিশ্রম করতে হবে।

প্রয়োজন সঠিক এসইও, সেজন্য আপনাকে তৈরি করতে হবে একটি এসইও ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট। এক্সপার্টদের দ্বারা প্রতিনিয়ত সেটি অপটিমাইজ করতে হবে এবং এটি খরচ সাপেক্ষ ব্যাপার।

প্রশ্ন আসতে পারে এটি কেন করবো চিন্তা করেন তো, আপনি যখন গুগলে কোন কিছু সার্চ করেন তখন কি লিখে সার্চ করেন।

আরেকটু সহজ করে দেই, ধরুন আপনি জুতা কিনবেন তাহলে কি লিখবেন?  বেস্ট সু সেলার ইন বাংলাদেশ অথবা আপনি একটি ট্রাস্টেড ই-কমার্স ওয়েবসাইট খুঁজে পেতে চাইলে কি লিখবেন?  বেস্ট ই-কমার্স ওয়েবসাইট ইন বাংলাদেশ বা টপ ই-কমার্স ওয়েবসাইট ইন বাংলাদেশ।

এই  শব্দগুলি আমরা লিখছি এগুলো  একেকটি কিওয়ার্ড, যেমন বেস্ট ই কমার্স একটি কিওয়ার্ড, টপ ই কমার্স ওয়েবসাইট ইন বাংলাদেশ একটি কি ওয়ার্ড।

অর্থাৎ আপনি গুগলে যখন কোন কিছু সার্চ দিচ্ছেন তখন কিওয়ার্ড রিসার্চ দিচ্ছেন।  তাই অবশ্যই এটির প্রতি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

 

৩. কাস্টমার অভিজ্ঞতা ভালোবাসে

কাস্টমার যখন অনলাইনে কেনাকাটা করছে তখন তার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোন ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে এসে ঝামেলা মুক্তভাবে এবং সহজে কেনাকাটা সম্পন্ন করতে পারছে

যদি আপনার প্রোডাক্ট কোয়ালিটি ভালো হয় কিন্তু আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে কেনাকাটা কষ্টসাধ্য,  তবে কখনোই কাস্টমার আপনার থেকে কিনবে না।

আপনাকে এমন একটি ই কমার্স কেনাকাটা অভিজ্ঞতা কাস্টমারদের দিতে হবে, যেন তারা কোনো রকম বাধা ছাড়াই আপনার ই-কমার্সের ওয়েবসাইটে ল্যান্ড করা থেকে শুরু করে চেক-আউট প্রসেস পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে পারে।

আপনার ই-কমার্স ওয়েবসাইট আসার পর দেখা গেল প্রোডাক্টের ইমেজ পেজ লোড হয় না,  কি মনে হয়? কাস্টমার কি আপনার ওয়েবসাইটে সেই ছবিটি লোড হওয়া পর্যন্ত ধৈর্য নিয়ে বসে থাকবে। কখনোই না। আপনি হলে কি করতেন?

 

৪. স্বচ্ছতা ও আস্থার জায়গা তৈরি করুন

দুটি ই-কমার্স ওয়েবসাইটের কথা চিন্তা করুন, একটিতে শুধুমাত্র ফোন নাম্বার দেওয়া আছে সেলারের সাথে যোগাযোগের জন্য আর অন্য ওয়েবসাইটে আছে সেলারের ফোন নাম্বার, অফিস এড্রেস এবং সেটি গুগল ম্যাপে দেখানো হয়েছে কিভাবে সেখানে আপনি পৌঁছাবেন।

প্রথম ই কমার্স ওয়েবসাইটে শুধু মূল্য  ছাড়া অন্য কিছু দেয়া নাই। শিপিং চার্জ কত ডিসকাউন্ট আছে কিনা কিছু জানা যায়না।

অপর ওয়েবসাইটটিতে  দেখলেন ডিসকাউন্ট যদি থাকে সেটি বাদ দিয়ে মূল্য দেখাচ্ছে এবং কত টাকা ডিসকাউন্ট পেয়েছেন সেটিও সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

বাসায় ডেলিভারি পেতে কত টাকা শিপিং চার্জ বা ডেলিভারি চার্জ দিতে হবে সেখানে উল্লেখ রয়েছে। যদি আপনার কোনো অভিযোগ থাকে বা পরামর্শ থাকে তবে সেটি প্রদানের জন্য ডেডিকেটেড ফোন নাম্বার এবং ইমেইল দিয়ে রেখেছে। আর বাকি সব এড্রেস তো আছেই

আপনি কোনটি বেছে নিতেন?

নিশ্চয়ই যে তার সমস্ত যোগাযোগ মাধ্যম ওপেন রেখেছে তাকে।

আপনি যত বেশি স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা প্রদান করবেন কাস্টমারদের।  ততবেশি তারা আপনার প্রতি আস্থা রাখবে। আর যত বেশি আস্থার জায়গাটা শক্ত করতে পারবেন তত বেশি কাস্টমারদের ওয়েবসাইটে ধরে রাখতে পারবেন। বারে বারে বেশি বেশি বেচাকেনা করতে পারবেন।

 

৫. এঙ্গেজমেন্ট

অনেক সেলার রয়েছেন যারা শুধুমাত্র প্রোডাক্টের ছবি পোস্ট করে ডেসক্রিপশন লিখে দিয়েই শেষ।

কাস্টমার একবার কেনাকাটা করার পর পরবর্তীতে আর কেনাকাটা করতে আসবে কিনা সে বিষয়টি তিনি আর ভাবেন না । অথচ তিনি চান তার বিক্রয় বেশি হোক। কিভাবে এটি সম্ভব যদি না আপনি কাস্টমারদের  ক্রমাগতভাবে আপনার সাথে এঙ্গেজ রাখতে না পারেন।

ফেসবুকে পোস্ট করছি আবার এঙ্গেজমেন্ট এর কি দরকার?  এমন প্রশ্ন অনেকেই করেন।  ফেসবুকে পোস্ট বুস্ট করা মানে এঙ্গেজমেন্ট নয়।  ফেসবুক বুষ্টিং এর অনেকগুলো উদ্দেশ্য রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে এঙ্গেজমেন্ট।

সেলিং অ্যাড এর পাশাপাশি এঙ্গেজমেন্ট ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কিভাবে সেটি করবেন?  একটু ধারনা দেয়া যাক।

আপনি ফ্যাশন ব্র্যান্ড নিয়ে কাজ করছেন আপনার প্রোডাক্ট হচ্ছে ডিজাইন ড্রেস।  ফেসবুকে পোস্ট করলেন কাস্টমার কিনলো,  এর পরে কি?

কাস্টমার কি পরবর্তী সময়ে প্রতিদিন আপনার পেজে বারবার আসবে?

তাদের নতুন কোনো চাহিদা এখন নেই এই মুহূর্তে আপনাকে যেটা করতে হবে সেটি হচ্ছে, ডিজাইন ড্রেসগুলো কিভাবে তারা রক্ষণাবেক্ষণ করবে, কোন পরিবেশের সাথে কোন ধরনের ড্রেস মানানসই,  ব্যক্তিত্বের সাথে মানিয়ে কোন কালারগুলো একজন বেছে নেবেন সে বিষয়গুলো নিয়ে আপনি ব্লগ আকারে অথবা টেক্সট আকারে ফেসবুক অথবা আপনার বিজনেস ব্লগে লেখালেখি করতে পারেন।

এতে যে সুবিধাটি হবে, কাস্টমার গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য আপনার সাথে এঙ্গেজ থাকবে। ফলে আপনার বিজনেস এক্সপোজার বহুগুণে বেড়ে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে যখনই তার কোন কিছুর প্রয়োজন হবে প্রথমেই আপনাকে বেছে নেবে।

আর এজন্যই ই-কমার্স বিজনেস ক্রমাগত কাস্টমারদের এঙ্গেজ করে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অনস্বীকার্যভাবে প্রয়োজন।

 

Facebook Comments

Leave a Reply