0
  Login
আপনার অনলাইন বিজনেসে কীভাবে কাস্টমারের আস্থা অর্জন করবেন?

আপনার অনলাইন বিজনেসে কীভাবে কাস্টমারের আস্থা অর্জন করবেন?

প্রচণ্ড গরম বা হাড় কাঁপানো শীতে মার্কেট ঘোরাঘুরির ক্লান্তি, দরকষাকষি করতে গিয়ে যুদ্ধে জড়ানো বা পছন্দের প্রোডাক্ট খুঁজে না পাবার ভোগান্তি এড়িয়ে ইচ্ছেমতো কেনাকাটা করার সুবিধা অনলাইন বিজনেসকে দারুণ জনপ্রিয় করে তুলেছে।

এই সুযোগে বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খুলে বসেছে অনলাইন প্রতারণার নানান রকম ফাঁদ, ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা।

মনে রাখবেন, ফেক অনলাইন শপ কখনোই তাদের বিজনেসের তথ্য সম্পূর্ণরুপে প্রকাশ করে না। থাকে না কাস্টমারদের সাথে সম্পৃক্ততা।একটু সচেতন হলেই তাদের ধরে ফেলা যায়।

অনলাইনে কাস্টমারদের কাছে আস্থাশীল অনলাইন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পেতে হলে আপনাকে জানতে হবে একটি আস্থাশীল অনলাইন শপ খুঁজে পেতে কোন বিষয়গুলো একজন কাস্টমার পর্যবেক্ষণ করেন ।

তাহলে কিভাবে কাস্টমার একটি আস্থাশীল অনলাইন শপ খোঁজে?

পেজের দেয়া তথ্য পর্যবেক্ষণ করে

কাস্টমার শুরুতে দেখে সেলারের ফেসবুক বিজনেস পেজ আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে পেজের about অপশনে গিয়ে তার ফোন নম্বর,ই-কমার্স ওয়েবসাইট, ইমেইল, বিজনেস এড্রেস ও বিজনেস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ আছে কিনা খেয়াল করে।

যদি সকল তথ্য দেয়া থাকে তাহলে, সিরিয়াস কাস্টমারেরা তথ্য যাচাই করার জন্য পেজে দেয়া নম্বরে কল করে নিশ্চিত হন, দেখেন নম্বরটি চালু আছে কিনা এবং এদের কেউ কেউ সেলারের সাথে কথা বলে।

কাস্টমারদের আস্থা অর্জনে আপনার করনীয়ঃ

পেজের সমস্ত তথ্য যেমন, ইমেইল, ফোন নম্বর, ঠিকানা, বিজনেসের সংক্ষিপ্ত বিবরণ সঠিকভাবে পূর্ণ করুন।

কাস্টমার মেসেঞ্জারে সেলারের সাথে যোগাযোগ করে

কিছু কাস্টমার পেজের মেসেঞ্জারে টেক্সট করে, সেলারের থেকে প্রোডাক্ট সম্পর্কে জানতে চায়। আসলে তাঁরা এর মাধ্যমে সেলারের আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্ব যাচাই করে। তাই কাস্টমার যখন মেসেঞ্জারে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে, চেষ্টা করবেন দ্রুততম সময়ে সঠিক তথ্যটি দিতে।

যদিও আপনার পেজে বা ই কমার্স সাইটে প্রোডাক্টের তথ্য থাকে তবুও কাস্টমার জানতে চাইলে প্রোডাক্টের গুনাগুন, ব্যবহার বিধি ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলবেন। তাদের প্রোডাক্টটি কেনার জন্য তাগাদা দিবেন না। তা,না হলে কাস্টমার সন্দেহপ্রবণ হতে পারে।

কাস্টমার আপনার পেজের রিভিউ গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে

বিজনেস পেজের রিভিউগুলো খুব সতর্কতার সাথে মনিটরিং করুন। টাকা দিয়ে কাস্টমারদের রিভিউ লিখাবেন না।

রিভিউ ভেরিফিকেশন সাইট যেমন www.yelp.com অথবা www.tripadvisor.com এর মতো রিভিউ সাইটগুলো বেশ কিছু ইনডিকেটর ব্যবহার করে ফেক রিভিউ নির্ণয় করতে সক্ষম। কিছু লোকাল কাস্টমার এইগুলি সম্পর্কে না জানলেও আন্তর্জাতিক বায়ার বিষয়গুলো নিয়ে বেশ সচেতন।

প্রোডাক্ট কেনার কিছুদিন অতিবাহিত হবার পরে ব্যবহারকারীর রিভিউ চাইতে পারেন। এতে আপনি তাদের কেয়ার করছেন ভেবে তাঁরা খুশি হবে। অন্যদিকে আপনার পেজের জন্য দেয়া রিভিউগুলো অথান্টিক হবে। মনে রাখবেন সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য সকল মানুষ ধরতে পারে।

অনেকে রিভিউ দেবার সময় সেলারের গুনগান করেন। যা একজন কাস্টমারের কাছে খুব কম গুরুত্ব বহন করে। অনেকসময় এটি সন্দেহের কারণ তৈরি করে। প্রোডাক্টের মান ও গুনাগুন নিয়ে লেখা রিভিউ কাস্টমারদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

কমপক্ষে ১০টি রিভিউ আছে কাস্টমার এমন অনলাইন সেলারদের গুরুত্ব দেয়

১ টি বা ২ টি রিভিউ কাস্টমারদের মনে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। কমপক্ষে ১০ টি রিভিউ থাকা সন্তোষজনক বলে কাস্টমারেরা মনে করেন। ১০টির মধ্যে ৭ টি রিভিউ পজিটিভ হলে কাস্টমার শপটি থেকে কেনাকাটা করতে স্বস্তি বোধ করে।

কেউ নেগেটিভ রিভিউ করলে সেটি ডিলিট করবেন না। নেগেটিভ রিভিউদাতারা সেলার সম্পর্কে কি নেগেটিভ বলছে এবং সেলার তাঁদের বাজে অভিজ্ঞতার জন্য কি ধরনের সমাধান দিয়েছে সেটি কাস্টমার গুরুত্বদিয়ে খেয়াল করে।

কাস্টমার একটি অনলাইন বিজনেসে পজিটিভ রিভিউের চেয়ে নেগেটিভ রিভিউকে বেশি বিশ্বাস করে।

নেগেটিভ রিভিউকে দক্ষতার সাথে ফেস করুন।এটি আপনার অনলাইন বিজনেসকে পজিটিভ করে তুলতে বেশি কার্যকর। তা না হলে কাস্টমার আপনাকে ফেক অনলাইন সেলার ভাবতে পারে।

ই কমার্স ওয়েবসাইট আছে এমন শপগুলো থেকে কেনাকাটায় কাস্টমার আস্থা পায়।

চূড়ান্তভাবে কেনার সিদ্ধান্ত নিতে কাস্টমার ই কমার্স ওয়েবসাইট আছে এমন শপগুলোকে প্রাধান্য দেয়। কাস্টমার মনে করেন ওয়েবসাইট ছাড়া অনলাইন কেনাকাটা বুদ্ধিমানের কাজ নই।

সেলার হিসেবে আপনার করনীয়,

কাস্টমারদের অনলাইন কেনাকাটায় মানসম্মত ওয়েবসাইট নিশ্চিতকরণ। জন্মগত ভাবেই মানুষের পছন্দ তার রুচিবোধ দ্বারা পরিচালিত। তাই আপনি ওয়েবসাইটির লুক ও এর কাঠামো নিয়ে আপনাকে সচেতন হতে হবে । ই কমার্স সেক্টরে দক্ষ এমন কোনো প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান হতে ওয়েবসাইটি তৈরি করবেন।

যারা প্রকৃত ব্যবসায়ী ও অনলাইন বিজনেস নিয়ে সিরিয়াস তাঁরা কখনোই ই কমার্স ওয়েবসাইটটি তৈরি করতে প্রফেশনাল প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কারো হতে নিম্নমানের সাইট তৈরি করে না।

পলিসি

নীতি বা পলিসি ছাড়া মানুষ ও বিজনেস কোনোটির মূল্য নেই। ই কমার্স বিজনেসের প্রাইভেসি পলিসি, রিফান্ড পলিসি, রিটার্ন ও এক্সচেঞ্জ পলিসি থাকতে হবে। পলিসি না থাকলে ভালো মানের কাস্টমার গ্রুপ দামদিয়ে আপনার শপ থেকে কেন প্রোডাক্ট কিনবে? তাদের বিক্রয়কালীন ও বিক্রয় পরবর্তী সেবার নিরাপত্তা কি?

কাস্টমার সবসময় তাদের প্রাধান্য দেয় যারা কাস্টমারদের স্বার্থ রক্ষা করে বিজনেস করে। তাই প্রকৃত অনলাইন ব্যবসায়ী হতে হলে থাকতে হবে বিজনেস ও কাস্টমার সার্ভিস পলিসি।

অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা প্রকৃত অনলাইন বিজনেসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইন্ডিকেটর।

যে সকল অনলাইন শপ অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা দেয় তাদের থেকে লেনদেন করতে কাস্টমার নিরাপদ বোধ করে। অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা চালু করতে একটি অনলাইন শপের ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট, ব্যবসায়ীর এন আই ডি কার্ড প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ তাকে ট্র্যাক করার সহজ। একজন ফেক অনলাইন সেলার কোন সময় এসকল তথ্য কাস্টমারদের সাথে শেয়ার করতে চাইবে না।আর এটি প্রকৃত অনলাইন ব্যবসায়ী ও ফেক অনলাইন ব্যবসায়ীর মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয়।

এছাড়াও অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা এখন সময়ের চাহিদা।শহুরে মানুষদের ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং এখন দারুণ জনপ্রিয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অক্টোবর ২০১৯ থেকে নভেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত Mobile Financial Services (MFS) এর একটি তুলনামূলক স্টেটমেন্টে প্রমান করে ইলেক্ট্রনিক লেনদেনের গুরুত্ব।

টাকা খরচ করলেই অনলাইনে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবেন এমন কল্পনা থেকে বের হয়ে এসে আপনার অনলাইন শপটির উপর আস্থা রাখার মতো যথেষ্ট কারণ কাস্টমারদের সামনে উপস্থাপন করুন।

কাস্টমারদের আস্থা অর্জন করতে হলে বিজনেসের সচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। জানতে হবে কোন কারণগুলি সত্যিকারভাবে একটি বিজনেসকে সবার কাছে আস্থাশীল করে তোলে।

যদি গড়পড়তা অনলাইন শপগুলোর মতো বিজনেস পরিচালনা করেন তবে হতে পারে অসাধু অনলাইন বিজনেসের তালিকায় আপনার স্থান হয়েছে। যা আপনি কোনদিনও জানবেন না।

Facebook Comments

Leave a Reply