0
  Login
কিভাবে আপনার ইকমার্স বিজনেসকে কম্পিটিশন থেকে আলাদা করবেন?

কিভাবে আপনার ইকমার্স বিজনেসকে কম্পিটিশন থেকে আলাদা করবেন?

আপনার ইকমার্স বিজনেসকে প্রতিযোগীদের থেকে আলাদাভাবে তুলে ধরার সক্ষমতা বিজনেসের সফলতা নির্ধারণ করে দেয়।

বাংলাদেশেই প্রায় ২০০০ ই কমার্স সাইট রয়েছে যারা একটিভ বিজনেস করছে।  সারা বিশ্বে রয়েছে ২৪ মিলিয়ন ই কমার্স সাইট। ই কমার্স সাইটের এই মহা সুমুদ্রে আপনাকে জানতে হবে কীভাবে সবার থেকে আলাদা থেকে কাস্টমার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয়।

প্রতিবার কেনাকাটার সিদ্ধান্ত নেবার মুহূর্তে কাস্টমার অবশ্যই যেন আপনার বিজনেসটিকে সবার আগে স্মরণ করে।

একটি ই কমার্স বিজনেস বড় হয়ে উঠে তখনই যখন কাস্টমারদের একটা বড় অংশ আপনাকে সবার থেকে আলাদা ভাবে মনে রাখতে পারে।

কাস্টমারদের সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত প্রোডাক্ট তৈরি করুন

সবাই ফ্যাশন আইটেম সেল করছে, আপনিও একই প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস করছেন। তাহলে আপনার সাথে তাদের পার্থক্য কি?

এই প্রশ্নের উত্তর যদি আপনার কাছে থাকে তবে আপনি সবাইকে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে সক্ষম হবেন ।

একটি উদাহরন দেয়, Sandha Collections bd একটি অনলাইন ফ্যাশন আইটেম রিসেলার। তারা ওয়েস্টার্ন ড্রেস সেল করেন। তাদের কাস্টমার তাদের ছাড়া আর অন্য কারো কাছে থেকে কেনাকাটা করেন না, যদিও তাদের  কেউ কম মূল্যে প্রোডাক্ট অফার করে।

সে এমন কি কৌশল অবলম্বন করেছিলো যে কাস্টমার অন্য শপে কম মূল্য পাওয়া সত্তেও তার কাছেই কেনাকাটা করতে সাচ্ছন্দ্য বোধ করলো ?

খুব সাধারন একটি চিন্তা কিন্তু তার প্রতিক্রিয়া ব্যাপক।

তার USP (unique selling proposition) হচ্ছে, তিনি প্লাস সাইজের মেয়েদের ড্রেস সেল করেন।

যারা একটু হেলদি তারা তাদের সাইজের ড্রেস সবার কাছে পান না।

কিন্তু  Sandha Collections bd তাদের সাইজের ড্রেস নানান সোর্স থেকে সংগ্রহ করে কাস্টমারদের সরবরাহ করেন।

প্লাস সাইজ মেয়েরাও চায় একটি দারুন ড্রেস পরতে, নিজেকে সুন্দর দেখাতে।

কিন্তু ফ্যাশান ডিজাইনাররা বেশিরভাগ স্লিম মেয়েদের জন্য  ড্রেস তৈরি করে, প্লাস সাইজের ড্রেস থাকে খুব কম। তাই ড্রেস পছন্দ হলেও হেলদি মেয়েরা সবার  থেকে কিনতে পারে না।

এখানেই   Sandha Collections bd প্লাস সাইজ কাস্টমারদের ডিজাইন ড্রেসের সমস্যার সমাধান করে বাড়িয়ে তুলেছেন বেচাকেনা।

মূল্য বৃদ্ধি করুন

মূল্য কমালেই কি বিজনেস বেশি হয়? এরাবিয়ান হর্সের ডেউটিনের একটি অ্যাড খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো। তারা বলেছিল জিনিস যেটা ভালো দাম তার একটু বেশি। মানুষ এটিকে গ্রহন করেছিলো। কারণ গুনগত মান নিয়ন্ত্রন করতে সক্ষম হলে কাস্টমার তার জন্য মূল্য দিবে।

তবে এখানেও কৌশল রয়েছে। সেটি হচ্ছে বিশেষত্ব। ধরুন, আপনি ব্যাকপ্যাক সেল করেন।

এখন আপনি বললেন আপনার তৈরি ব্যাগ ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি।

কি কি সুবিধা এই ব্যাগ তাদের দিতে পারে সেটি বললেন। আর দামটি বাড়িয়ে দিলেন।

ধরুন সাধারন ব্যাগ ৫০০ টাকা আর আপনার তৈরি ব্যাগ ৮০০ টাকা কারণ এটি তাদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি।

তারা সবার থেকে আপনাকে বেশি গুরুত্ব দিবে কারণ আপনি একটি সুনির্দিষ্ট গ্রুপকে টার্গেট করেছেন।

আরও একটি উধাহরন দেয়া যাক, আপনি অফিসের জন্য হোলসেলে কলম সেল করেন।

প্রতি বক্সে ১২ টি কলম থাকে এক বক্স কলমের দাম ৬০ টাকা আপনার কেনা বক্স প্রতি ৫০ টাকা অর্থাৎ প্রতিটি কলম ৫ টাকা।

লাভ বক্সপ্রতি ১০ টাকা আর কলম প্রতি ০.১৬ পয়সা।

এবার আপনি অফিসিয়াল গিফট দেবার জন্য কলম সেল করা শুরু করলেন, একটু প্রিমিয়াম লুক দিতে দারুন একটি পাকেজিং সাথে আকর্ষণীয় ডিজাইন।

এবার আপনি প্রতিটি কলম সেল করছেন ৬০ টাকা।

বক্স  ৭২০ টাকা। প্রতি বক্স কেনা  ৩৬০ আর সাথে পাকেজিং কলম প্রতি আরও ১০ টাকা তাহলে বক্স প্রতি দাম হয় ৪৮০ টাকা।

বক্স প্রতি লাভ ২৪০ টাকা। আর কলম প্রতি ২০ টাকা।

গিফট করার জন্য কেউ ৫ বা ১০ টাকার কলম কেনে না।

এভাবে বিশেষায়িত প্রোডাক্ট সেল করে  মূল্য বাড়িয়ে বেশি লাভ করতে পারেন।

সার্ভিস কোয়ালিটি বাড়িয়ে তুলুন, কাস্টমারদের মনে জায়গা করুন

কাস্টমার সার্ভিস মানেই ফোন কথা বলা নয়, কাস্টমারদের অনলাইন কেনাকাটার অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করা কাস্টমার সার্ভিসের একটি বড় দায়িত্ব।

আপনি কাস্টমারদের যত সম্ভব ঝামেলা কম করে কেনাকাটা করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সাহায্য করুন।

ই কমার্স সাইটে সাইন আপ না করলে তাদের চাপ দিবেন না। অনেকে ফরমের সব গুলো ফাকা ঘর পুরন না করলে চেকআউট করতে দেন না।

কাস্টমার কেনাকাটা করার পদ্ধতিতে বিরক্ত বোধ করলেই আপনাকে ছেড়ে যাবে। অনলাইনে কি আর শপের অভাব পড়েছে যে আপনার থেকেই কিনতে হবে।

কি করবেন তাদের ধরে রাখতে? তাদের মনে জায়গা তৈরি করুন প্রথমে তারপরে তাদের যা বলবেন তারা তাই করবে।

কারণ, তখন কাস্টমার আপনাকে ভালবাসবে।

তাদের অর্ডার করা প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেবার সময় সারপ্রাইজ গিফট হিসেবে কিছু না কিছু দিন। ফ্রি পেতে কে না ভালোবাসে তবে যদি তাদের ফ্রি বলে দেন তবে কেউ কেউ অখুশি হতে পারে, তাই বলুন গিফট।

মনে আছে ছোট বেলায়, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় সামান্য  একটি প্লাস্টিক মগ বা কাঁচের প্লেট পুরস্কার পেলে নিজেকে অনেক গর্বিত মনে হতো।

এভাবে কাস্টমারদের মনে আবেগ তৈরি করুন।  ধীরে ধীরে আরও বেশি সেল করুন।

ইউজফুল প্রোডাক্ট বান্ডিল অফার করুন

আপনি যদি একজন ষ্টেশনারী আইটেম সেলার হন তবে আলাদা আলাদা প্রোডাক্ট সেল করার পাশাপাশি বান্ডিল আকারে প্রোডাক্ট সেল করুন। কীভাবে?

কলম, নোটপ্যাড, স্টেপলার একসাথে একটি বান্ডিল হতে পারে। খাতা, কলম, পেন ড্রাইভ একসাথে বান্ডিল  হতে পারে।

কাস্টমারদের প্রতিদিনের প্রয়োজনকে সহজ করে দিন, তাদের একই ধরনের প্রোডাক্ট আলাদা আলাদা ভাবে না কিনে একসাথে কিনতে উৎসাহী করুন।

তাতে এক কাস্টমারের কাছে একসাথে বেশি সেল করার সুযোগ থাকবে।

আর এই বান্ডিল অফারের প্রোডাক্টগুলো যেহেতু তাদের লাগেই ফলে তারা সেগুলো আগ্রহ নিয়েই কিনবে।

আবার একই পরিবারে আলাদা আলাদা সদস্য একটি বান্ডিল কিনে তাদের দরকারি প্রোডাক্টগুলো ভাগ করে নেবার সুবিধা পেতেও কিনতে আগ্রহী হবে।

পরিমানে কম সেল করুন

আপনি যেই প্রোডাক্টই সেল করুন না কেন সেগুলির লিমিটেড এডিশন সেল করতে চেষ্টা করুন।

লিমিটেড এডিশনের প্রতি কাস্টমারদের ঝোঁক সবসময় ছিলো এখনো আছে।

লিমিটেড এডিশনের আথে যদি যোগ হয় লিমিটেড কোয়ানটিটি তবে কাস্টমারের মনে  FOMO ( Fear of missing) ভালোমতো প্রভাব ফেলবে। কাস্টমার প্রোডাক্টটি দ্রুত সেল হয়ে যাবার সম্ভবনায় না পাবার ভয়ে কিনবে।

এবং একটি নির্দিষ্ট সময় পরে প্রোডাক্ট গুলো স্টক আউট দেখান।

প্রয়োজনে কিছুদিন গ্যাপ দিয়ে আবার রেডি স্টক দেখান।

এতে করে কাস্টমার বুঝেব আপনার শপে সত্যিকার অর্থে বেশিদিন প্রোডাক্ট থাকে না আর প্রতি নিয়ত নতুন প্রোডাক্ট আসে।

প্রোডাক্ট নিয়ে গল্প বলুন

প্রোডাক্টের সুবিধা আর দাম এগুলো ছাড়া আর কিছুই কেউ বলেন না। কাস্টমার এই একই ধরনের কনটেন্ট দেখতে দেখতে ক্লান্ত তারা আপনাকে আলাদা করবে কীভাবে বুঝে উঠে না।

কিন্তু যদি প্রোডাক্টের তথ্য দেন গল্পের মাধ্যমে যেমনটি এই ই কমার্স সেলার করেছেন,

কাস্টমারদের মনে এই ধরনের গল্প আগ্রহের জায়গা তৈরি করে। আপনি প্রোডাক্টের ব্যবহার পদ্ধতি নিয়ে কথা বলতে পারেন কারণ অনেকেই প্রোডাক্ট কেনে কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার পদ্ধতি জানে না।

তাদের জানান কীভাবে একটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ উপযোগিতা পাওয়া সম্ভব। কেউ চায় না তার খরচ করা টাকা বিফলে যাক।

পরিশেষে,

ভিন্ন চিন্তা কাস্টমারদের মনোযোগ আকর্ষণ করে, আর মনোযোগ আকর্ষণে বাড়ে বেচাকেনা। ই কমার্স বিজনেসের সফলতা মানেই কাস্টমারদের মনোযোগ আকর্ষণের এই লড়াইয়ে নিজের দক্ষতার প্রমান দেয়া।

ই কমার্স দুনিয়ায় পাত্তা আদায় করতে হলে নিজেকে করে তুলতে হয় বিশেষায়িত। তাহলেই কাস্টমারদের দৃষ্টি আপনার দিকে নিয়ে আনতে সক্ষম হবেন।

Facebook Comments

Leave a Reply