0
  Login
কম্পিউটার-আধুনিক বিশ্বের বিজ্ঞানের এক বিষ্ময়কর আবিষ্কার, কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত

কম্পিউটার-আধুনিক বিশ্বের বিজ্ঞানের এক বিষ্ময়কর আবিষ্কার, কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তারিত

কম্পিউটার এর প্রাথমিক ধরনা

একবিংশ শতাব্দীর অত্যাধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের অতি প্রয়োজনীয় এই কম্পিউটার নামের যন্ত্রটি আধুনিক বিশ্বের বিজ্ঞানের এক বিষ্ময়কর আবিষ্কারসাধারন মানুষের কাছে এটা একটা সাদামাটা ক্যালকুলেটর, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। কিন্তু একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদের নিকট কম্পিউটার হচ্ছে একটি অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস; যা তথ্য গ্রহন করে নির্দেশনার মাধ্যমে সেই তথ্যকে প্রসেস করে সমস্যা সমাধান করে এবং তা সংরক্ষণ করে রাখে।

Computer শব্দটির অর্থ কি?

গ্রীক শব্দ “Compute” থেকে আধুনিক Computer শব্দের উৎপত্তি। আবার ল্যাটিন শব্দ Computare ও থেকে Computer শব্দের উৎপত্তি। যার আর্থ গণনা করা, সেই দিক খেকে চিন্তাকরলে এর অর্থ গণনা কারী যন্ত্র বিশেষযেমন :- Calculator, Counter, Conductor. 

যদিও কম্পিউটারের আবিষ্কার হয়েছে গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে কিন্তু আধুনিক কম্পিউটার শুধু গণনা কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেইকম্পিউটার এখন গবেষনা থেকে শুরু করে গৃহস্থলী কাজেও ব্যবহার করা হচ্ছে।

কম্পিউটারের আবিষ্কার

প্রাগৈতিহাসিক যুগে গণনার যন্ত্র উদ্ভাবিত বিভিন্ন প্রচেষ্টাকে কম্পিউটার ইতিহাস হিসেবে ধরা হয়। প্রাচীন কালে মানুষ একসময় সংখ্যা বুঝানোর জন্য ঝিনুক, নুড়ি, দড়ির গিট ইত্যাদি ব্যবহার করত। পরবর্তীতে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশলযন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি প্রাচীন গণনা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। অ্যাবাকাস ফ্রেমে সাজানো গুটির স্থান পরিবর্তন করে গননা করার যন্ত্রখ্রিস্টপূর্ব ৪৫০/৫০০ অব্দে মিশরে বা চীনে গননা যন্ত্র হিসেবে অ্যাবাকাস তৈরি হয়। 

১৬১৬ সালে স্কটল্যান্ডের গণিতবিদ জন নেপিয়ার গণনার কাজে ছাপা বা দাগ কাটাকাটি অথবা দন্ড ব্যবহার করেনএসব দন্ড জন নেপিয়ার (John Napier) এর অস্থি নামে পরিচিত১৬৪২ সালে ১৯ বছর বয়স্ক ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লেইজ প্যাসকেল সর্বপ্রথম যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। তিনি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারের সাহায্যে যোগ বিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করেন১৬৭১ সালের জার্মান গণিতবিদ গটফ্রাইড ভন লিবনিজ প্যাসকেলের যন্ত্রের ভিত্তিতে চাকা ও দন্ড ব্যবহার করে গুণভাগের ক্ষমতাসম্পন্ন আরো উন্নত যান্ত্রিক ক্যালকুলেটর তৈরি করেন। তিনি যন্ত্রটির নাম দেন রিকোনিং যন্ত্র (Rechoning Mechine)। পরে ১৮২০ সালে টমাস ডি কোমার রিকোনিং যন্ত্রের পরিমার্জন করে লিবনিজের যন্ত্রকে জনপ্রিয় করে তোলেন। 

উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণব্যবহারের ধারণা (যা কেবলমাত্র যান্ত্রিকভাবে, মানে যেকোনও রকম বুদ্ধিমত্তা ব্যতিরেকে, গাণিতিক হিসাব করতে পারে) প্রথম সোচ্চার ভাবে প্রচার করেন চার্লস ব্যাবেজ। তিনি এটির নাম দেন ডিফারেন্স ইন্জিন (Difference Engine)। এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় (১৮৩৩ সালে) তিনি অ্যানালিটিক্যাল ইন্জিন নামে আরও উন্নতসর্বজনীন একটি যন্ত্রে ধারনা লাভ করেন। কিন্তু প্রয়োজনীয় যন্ত্রঅর্থের অভাবে কোনোটির কাজই তিনি শেষ করতে পারেননি। 

কম্পিউটার বিজ্ঞানের সত্যিকার সূচনা হয় অ্যালান টুরিং এর প্রথমে তাত্ত্বিক ও পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবনের ফলে মাইক্রোকম্পিউটারের দ্রুত বিকাশ ঘটতে থাকে। বাজারে প্রচলিত হয় বিভিন্ন প্রকৃতি ও আকারের কম মূল্যের অনেক রকম পার্সোনাল কম্পিউটার (Personal Computer) বা পিসি (PC)। সে সঙ্গে উদ্ভাবিত হয়েছে অনেক রকম অপারেটিং সিস্টেম, প্রোগ্রামের ভাষা, অগণিত ব্যবহারিক প্যাকেজ প্রোগ্রাম। এরসাথে ব্যাপক বিস্তৃতি ঘটেছে কম্পিউটার নেটওয়ার্কইন্টারনেটের এবং সংশ্লিষ্ট সেবা ও পরিসেবা।

কম্পিউটারের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

কম্পিউটার যন্ত্রের জন্মলগ্ন থেকে এই সময়কাল পর্যন্ত সময়কে মোটামুটি তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ

১) প্রাচীন যুগ
২) মধ্য যুগ
৩) বর্তমান বা আধুনিক যুগ

(১) প্রাচীন যুগঃ

মূলত: কম্পিউটারের জন্ম কিন্তু আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগে। খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় তিন হাজার বছর আগে চীন দেশে গণনা কাজের জন্য এক ধরণের যন্ত্র ব্যবহার করা হতো। যার নাম ছিল এ্যাবাকাস(Abacus)। এই Abacus নামের যন্ত্রের সাহায্যে প্রাচীন যুগে বিভিন্ন গণনার কাজ করা হতো। আবার এই Abacus থেকেই আধুনিক ক্যালকুলেটর তৈরীর ধারণা এসেছে এটা অনস্বীকার্যএই যন্ত্রে গণনার কাজের জন্য ব্যবহার করা হতো কতকগুলো গোল চাকতি। এই চাকতি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে গণনার কাজ সম্পন্ন করা হতো।কম্পিউটারকে যদি বড় আকারের গণনা যন্ত্র হিসেবে ধরা হয় তাহলে এই Abacus-ই কম্পিউটারের প্রথম চিন্তার সূত্রপাত

(২) মধ্যযুগঃ

Abacus আবিষ্কারের পর পার হয়ে যায় কয়েক হাজার বছরসভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের চিন্তা চেতনা, জ্ঞানজানার ক্ষেত্রও হয়ে উঠে বড়ো ও উন্নত। Abacus তৈরী হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব প্রায় তিন হাজার বছর আগে চীন দেশে। আর প্রথম যান্ত্রিক গণনা যন্ত্র তৈরি হয় ১৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দে। স্যার ব্লায়াস প্যাসকেল নামের একজন ফরাসি বিজ্ঞানী এটা তৈরি করেনবিজ্ঞানীর নাসানুসারে এই যন্ত্রের নাম দেওয়া হয়েছিল প্যাসকেলাইনএটার কার্যপ্রণালী কিন্তু ছিল Abacus এর মতই।তবে এতে চাকতির পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছিল দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারমানুষ প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে ব্যবহার করলো এই যন্ত্র। 

১৬৯৪ সালের দিকে প্যাসকেলাইন যন্ত্রের কিছুটা উন্নত সংষ্করণ তৈরি করলেন গটফ্রেড উইলহেম ভন লেইবনিজএই যন্ত্রে নাম দিলেন তিনি স্টেপড রেকোনার। পেরিয়ে গেল প্রায় আরও সোয়া এক’শ বছর১৮২০ সালের মাঝামাঝি স্টেপড রেকোনার যন্ত্রকে আরও একটু উন্নত করলেন টমাস দ্যা কোমার। ততদিনে মানুষও বেশ আধুনিক হয়েছে।নতুন নতুন প্রযুক্তির দিকে তাদের অনুসন্ধান অব্যহত রয়েছে। আর এরই ফলশ্রুতিতে ১৮২১ সালে ঘটে গেল এক বিপ্লব। 

চার্লস ব্যাবেজ নামের একজন ইংরেজ গণিতবিদ অংকের বিভিন্ন তথ্যের সহজ সমাধানের জন্য তৈরি করে ফেললেন একটি যন্ত্রযার নাম দেওয়া হলো ডিফারেন্স ইঞ্জিনঅনতিকাল পরে এই যন্ত্রটিকে আরও আধুনিক করা হলো, নাম দেওয়া হলো এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিন১৮২১ সালের পূর্বে যেসব যন্ত্র তৈরি হয়েছিল সেগুলো শুধু অংক আর সংখ্যা নিয়ে কাজ করা হতো কিন্তু চার্লস ব্যাবেজের উদ্ভাবিত এই যন্ত্রে অংকের পাশাপাশি তথ্য নিয়েও কাজ করা যেত। তবে এই যন্ত্রের কিছু বাধ্যবাধকতাও ছিল।যন্ত্রটি চালাতে হতো একধরণের ছিদ্রযুক্ত পাঞ্চকার্ড দিয়ে এবং এই পাঞ্চকার্ডটি একবারই মাত্র ব্যবহার করা যেতদ্বিতীয়বার ব্যবহার করতে হলে আবার নতুন কার্ড প্রয়োজন হতো। ব্যাভেজের যন্ত্রে ছিল তিনটি অংশ। সেগুলো হলো- 

(ক)তথ্য বা নির্দেশ প্রদাণের অংশএই অংশে থাকবে যন্ত্রটি চালানোর সমস্ত তথ্য বা নির্দেশ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ফলাফল
(খ)ফলাফল প্রদানের অংশএই অংশে গণনার উপযুক্ত ফলাফল প্রদান করবে।
(গ)তথ্য সংরক্ষণএই অংশে তথ্যগুলো সংরক্ষণ করা যাবে।

বর্তমানের আধুনিক একটি কম্পিউটারে যেসব অংশ দেখা যায় বা বিদ্যমান রয়েছে চার্লস ব্যাবেজের এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিনে তার সবগুলোই বিদ্যমান ছিল। তাছাড়া এই প্রথম কোন যন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে গণনা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ করতে পারতো। সুতরাং এটা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, চার্লস ব্যাবেজই হচ্ছেন কম্পিউটারের আদি পিতা। 

১৮৯০সাল। ডঃ হারম্যান হলোরিথ নামের একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারী বিভাগে কাজ করতেনসেই সময় লোক গণনার কাজ হাতে নেন আমেরিকান সেনসাস ব্যুরো নামের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান।তারা নিশ্চিত জানতো এই গণনার কাজে লোকবল লাগবে প্রচুর, তেমনি সময়ও লাগবে অনেক। মোটামুটি দশ বছরের আগে গণনার কাজ শেষ করা যাবে না, এমই ধারণা ছিল তাদের। 

ডঃ হারম্যান তাদের এই ধারণা ভেঙ্গে দিলেন। তিনি চার্লস ব্যাবেজের যন্ত্রের সাথে টেবুলেটর নামের একটি যন্ত্র জুড়ে দিলেনআর এই যন্ত্রের বৈশিষ্ট্য হলো এতে কাগজের তৈরী পাঞ্চকার্ড ব্যবহার করা যাবে, আর এই পাঞ্চকার্ডে ছিদ্রও করতে পারবে তার এই নতুন যন্ত্র টেবুলেটরএসময় যন্ত্রটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। 

এই যন্ত্রের অবিষ্কারের সাথে সাথে পুরো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সাড়া পড়ে গেল। অবিশ্বাস্যভাবে ডঃ হারম্যান এই যন্ত্রের সাহায্যে আদমশুমারীর দশ বছরের কাজ শেষ করে ফেললেন মাত্র তিন বছরে।এই অভূতপূর্ব সাফল্য ডঃ হারম্যানকে উদ্বুদ্ধ করে তুললো।তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করলেন একটি কোম্পানী। নাম দিলেন টেবুলেটিং মেশিন কোম্পানী। এই কোম্পানীই পরবর্তীতে আইবিএম নামে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ কম্পিউটার কোম্পানী হিসেবে স্বীকৃতি পায়

(৩) আধুনিক যুগঃ

ডঃ হারম্যানের আবিষ্কারের পর কেটে গেল প্রায় পঞ্চাশ বছরএই দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে ছোটখাটো পরিবর্তন ছাড়া আর তেমন উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না।১৯৪৩ সালের গোড়ার দিকে পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির জন মশলি ও প্রেসপার একার্ট নামের দুই প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়ার প্রথম প্রজন্মের ডিজিটাল কম্পিউটার তৈরিতে হাত দিলেন। পুরো তিন বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১৯৪৬সালের মাঝামাঝি তারা সত্যি সত্যি তৈরি করে ফেললেন প্রথম ইলেক্ট্রনিকস ডিজিটাল কম্পিউটারতার নাম দেওয়া হলো এনিয়াককম্পিউটারের ইতিহাসে এলো এক নতুন অধ্যায়।আমরা এখন যেসব কম্পিউটার দেখতে পাই এনিয়াক তার চাইতে অত্যন্ত কম ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও আকারে ছিল প্রকান্ডএখন একটা কম্পিউটার রাখার জন্য একটি ছোট্ট টেবিল যথেষ্ট। কিন্তু তখন এনিয়াক কম্পিউটারকে রাখার জন্য দরকার পড়তো ৯মিটার প্রস্থ১৫মিটার দৈঘ্যের একটি ঘরআর এর ওজন ছিল প্রায় ১৫ টন। এটা চালানোর জন্য লাগতো ১৫০ কলোওয়াট বিদ্যুৎমজার ব্যাপার হলো কাজ করতে করতে এটা অসম্ভব রকমের গরম হয়ে উঠতো তখন এটাকে মাঝে মাঝে ঠান্ডা পানি ঢেলে শীতল করার প্রয়োজন পড়তো।এনিয়াক ছিল বাল্ব নির্ভর কম্পিউটার আর এতে ১৮০০০ বাল্ব লাগানো ছিল।তবে আগেকার কম্পিউটারের তুলনায় এটা ছিল দ্রুত গতিসম্পন্ন। প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫০০০ গণনার কাজ করতে পারতো। 

পৃথিবীর সভ্যতায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার সাথে সাথে এনিয়াকের বাধ্যবাধকতা কাটিয়ে ওঠার জন্য মানুষ নিরলস গবেষনা চালিয়ে যেতে লাগলো।অবশেষে ১৯৪৬ সালের শেষ দিকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার হাওয়ার্ড এইকিন নামের একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী তৈরী করে ফেললেন এনিয়াকের চেয়ে কিছুটা ছোট এবং অরেকটু ক্ষমতাসম্পন্ন ইলেক্ট্রনিকস কম্পিউটারযার নাম দেওয়া হলো মার্কওয়ান। তবে ছোট হলেও এই কম্পিউটারটি ছিল ১৫মিটার দৈঘ্য৬মিটার প্রস্থ বিশিষ্টএর উচ্চতা ছিল ২.৪মিটার।এতে ব্যবহৃত বিদ্যুতের তারের দৈর্ঘ্য ছিল ৮০০ কিলোমিটারআর এটা তৈরি করতে যে খরচ পড়তো সেই খরচ দিয়ে বর্তমান সময়ের পুরো একটা কম্পিউটার কোম্পানী বানিয়ে ফেলা যাবে। 

১৯৪৮ সালের শেষদিকে বারডিন, ব্রাটান এবং শকলি নামের তিন প্রতিভাবান আমেরিকান বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার করলেন ট্রানজিষ্টার। ফলে কম্পিউটার দিগন্তে সূচিত হলো এক নতুন বিপ্লবেরবাল্ব নির্ভর এনিয়াক এবং মার্কওয়ান কম্পিউটারের জায়গা জুড়ে নিল এই ট্রানজিষ্টার লাগানো কম্পিউটার।এতকরে কম্পিউটারের আকারেও বেশ পরিবর্তন এলো, ছোট হয়ে গেল বিশাল আকারের কম্পিউটারতার উপর তথ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ফলাফল প্রদাণের সময়সীমা একেবারে কমে গেলআবার তৈরী খরচও অনেক কমে গেলএই সময়কার কম্পিউটারের মধ্যে ১৯৪৯ সালের তৈরি এডস্যাকের নাম উল্লেখযোগ্যএই কম্পিউটারের মূল নির্মাতা হলেন হাঙ্গেরিয় গণিতবিদ জন ভন নিউম্যানএর পরপরই ১৯৫১ সালে আমেরিকার রেমিংটন র‌্যান্ড নামের এক কোম্পানী তৈরি করে ইউনিভ্যাক ওয়ান নামের একটি কম্পিউটারবাণিজ্যিক ডাটা প্রসেসিং কাজের উপযোগি এই কম্পিউটারটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। তবে উচ্চমাত্রায় বিদ্যুৎপ্রবাহ সরবরাহ করার সময় যন্ত্রটি বেশ গরম হয়ে উঠতো। 

১৯৫৮সালের মাঝামাঝি সারা পৃথিবী চমকে উঠলো জ্যাক কিলবি নামের একজন প্রতিভাবান মার্কিন বৈজ্ঞানিকের কল্যাণে।তিনি আবিষ্কার করে ফেললেন সিলিকন চিপএই সিলিকন চিপের ছোট্ট এক টুকরোর উপর স্থাপন করা হলো অনেকগুলো ট্রানজিষ্টরএদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করার জন্য তৈরি করা হলো সুক্ষ্ম পথ, যাকে বলা হয় সার্কিটএই সার্কিটের মধ্যদিয়ে উচ্চমাত্রার বিদ্যুৎপ্রবাহ প্রবাহিত করা সম্ভব হয়ে উঠলো। এই সার্কিট সংযোজনের নাম দেওয়া হলো আইসি বা ইনটিগ্রেটর সার্কিটএই ইনটিগ্রেটর সার্কিট দিয়ে কম্পিউটার তৈরি করতে উৎসাহী হলেন প্রস্তুতকারকরা। কারণ এতেকরে কম্পিউটার আকারে অনেক ছোট হবে। আর সেইসাথে খরচও কমে আসবে অনেকআবার কম্পিউটারেরও ব্যাপক প্রসার ঘটবে।পরবর্তীতে এই ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের ব্যপক উন্নতি সাধিত হয়। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তাক্লারা উপত্যকায় চলতে থাকে গবেষণার পর গবেষণা।একসময় এই জায়গাটার নামই হয়ে যায় সিলিকন ভ্যালি।১৯৭১সালে ছোট্ট একটুকরো সিলিকন চিপের উপর অনেকগুলো ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট বসানো সম্ভব হয়ে ওঠে। এই সন্নিবেশিত চিপের নাম দেওয়া হয় মাইক্রোপ্রসেসর। বর্তমানে আধুনিক কম্পিউটার এই মাইক্রোপসেসরের উপর নির্ভরশীল। 

তারপর থেকে উদ্যমী মানুষ একের পর এক উন্নতির সোপানে পা রাখতে শুরু করে। একসময় যে কম্পিউটারকে রাখতে হতো বিশাল এক হলরুমের মতো একটি ঘরে। এখনকার একটি কম্পিউটারকে একটি ছোট্ট টেবিলেই রাখা যাচ্ছে। শুধুকি তাই? এখন ছোট্ট কোল জুড়ে রাখা যায় এই কম্পিউটারকে। যার নাম ল্যাপটপ কম্পিউটারএছাড়াও আছে হাতের উপর রেখে কাজ হরার মতো কম্পিউটার নাম যার পামটপ কম্পিউটার ইত্যাদি।কম্পিউটারের এই ব্যপক পরিবর্তনের সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র সিলিকন চিপস আবিষ্কারের পর থেকে এর ব্যবহারের মাধ্যমে।ভাবতে অবাক লাগবে ক্যালকুলেটর, ক্যামেরা, ঘড়ি ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিকস জিনিষের ভিতর বসানো চিপসেট ইচ্ছা করলে একটা সুচের ছিদ্রের ভিতর দিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করানো যায়এভাবেই আমাদের ব্যবহৃত কম্পিউটার নামের যন্ত্রটির আধুনিকায়ন হয়েছে এবং ভবিষ্যতে হয়তো আরও অনেক কিছুই অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য

কম্পিউটার এর প্রজন্ম সমূহ

আই বি এম কোম্পানীর একটি বিজ্ঞাপন থেকে কম্পিউটারকে প্রজন্ম হিসেবে ভাগ করার প্রথম প্রথা চালু হয়। ইলেকট্রনিক্সের প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটারের প্রজন্মকে ৫টি ভাগে ভাগ করা হয়। 

(১) প্রথম প্রজন্ম (১৯৪০১৯৫৬): এ প্রজন্মের কম্পিউটার গুলো আকারে বড় ছিল, গতি ছিল কম। এ প্রজন্মের উল্লেখযোগ্য কম্পিউটার হচ্ছে এ বি সি, ইউনিভিকইনিয়াক এর ওজন ছিল ৩০ টন। এতে ১৮০০ শত ভ্যাকুয়াম টিউব ব্যবহৃত হয়। এট চালাতে বিদ্যুৎ খরচ হত ২০০ কিলোওয়াট১৯৪৮ সালে ট্রানসিস্টার আবিষ্কার হয়। 

(২) ২য় প্রজন্ম (১৯৫৬১৯৬৩): এ প্রজন্মের কম্পিউটারে ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানসিস্টার এর ব্যবহার শুরু হয়। উল্লেখযোগ্য কম্পিউটার হচ্ছে আইবিএম১৪০০, আইবিএম৭০৯০, আরসিএল৩০১৫০১ এবং আরসিএল৩০০ ইত্যাদি। 

(৩) ৩য় প্রজন্ম (১৯৬৪১৯৭১): এ প্রজন্মের কম্পিউটারে মনিটর, মেমরি ও প্রিন্টারের প্রচলন শুরু হয়। উল্লেখযোগ্য কম্পিউটার হচ্ছে আইবিএম৩০০, ৩৭০ এবং জি ই-৬০০ ইত্যাদি। ৩য় প্রজন্মেই বাংলাদেশে কম্পিউটারের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৬৪ সালে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পরমানু শক্তি কেন্দ্র আইবিএম১৬২০ নামের কম্পিউটার নিয়ে আসে। 

(৪) ৪র্থ প্রজন্ম (১৯৭১বর্তমান): এ প্রজন্মের কম্পিউটারের RAM, ROM, উচ্চ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন Memory, Windows XP,Vista, Linax, Windows-7 ইত্যাদির উদ্ভব ঘটে ব্যাপক হারে। এ প্রজন্মে Micro Computer, Super Computer এর ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। 

(৫) ৫ম প্রজন্ম (আগামী দিনগুলি): জাপানে ১৯৮১ সালে ১৪টি দেশের কম্পিউটার বিজ্ঞানীদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলন থেকে ঘোষনা করা হয় ১৯৯৫ সাল থেকে আবিষকৃত সকল কম্পিউটার ৫ম প্রজন্মের কম্পিউটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে পরে ঘোষনা প্রত্যাহার করা হয়। এ প্রজন্মের কম্পিউটারের কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, ভয়েস রিকগনিশনসহ অন্যান্য বিষয় সংযোজিত থাকবে।

কম্পিউটারের শ্রেণীবিভাগ

কাজের পরিমাপ অনুযায়ী কম্পিউটারকে ৩ টি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়েছে :

  1: Digital Computer 
  2: Analog Computer 
  3: Hybrid Computer

Digital Computer:

গানিতিকযুক্তিগত কাজে এই ধরণের কম্পিউটার বেশি বব্যহৃত হয়ে থাকে। বর্তমানে বাজারে প্রচলিত প্রায় সকল কম্পিউটারই ডিজিটাল কম্পিউটারআকার ও ক্ষমতা অনুসারে ডিজিটাল কম্পিউটারকে পাচ ভাগে ভাগ করা যায়:

Grid ComputerSuper ComputerMainframe ComputerMini ComputerMicro Computer

আমরা সাধারনত যেধরনের  কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকি সেগুলো হচ্ছে micro computer। মাইক্রো কম্পিউটার কে আবার ৬ টি ভাগে বিভক্তযেমন :-

Desktop ComputerLaptop ComputerPalmtop ComputerNotebook ComputerPocket ComputerHome Computer

Analog Computer:

গ্রাফ/চিত্রে ফলাফল অর্জন কর হয় এই ধরনের কম্পউটারের মাধ্যেমতেল শোধনাগারে তেল উৎপাদনের হিসাব, বিদু্যৎ উৎপাদন কেন্দ্রে বিদু্যৎ উৎপাদনের হিসাব, ইত্যাদি কাজে এনালগ কম্পিইটার ব্যবহার করা হয়

Hybrid Computer:

বৈজ্ঞানিক জটিল সমস্যার সমাধানে এ ধরনের কম্পিউটার কার্যকরি ভুমিকা অবলম্বন করে। পারমানুবিক শক্তি উৎপাদন প্লান্ট. মহাকাশযান, যুদ্ধে ক্ষেপনাস্ত্র নিক্ষেপ করার কাজে এই ধরনের কম্পিউটার  ব্যবহার করা হয়

কম্পিউটারের ব্যবহার

যদিও কম্পিউটারের শুরু গনন যন্ত্র হিসাবে এবং জটিল অংকহিসাব কসার কাজে সাহায্য করার জন্য; বর্তমান মানব জীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে এর ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে। কম্পিউটার কি কাজে ব্যবহার হয় সে প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বরং জিজ্ঞাসা করা যায় কি কাজে ব্যবহার হয় না তাহলে উত্তর দেওয়াটা সহজকম্পিউটার ছাড়া উন্নত বেবস্থাপনা,উৎপাদন,গবেষণা,টেলিযোগাযোগ, প্রকাশনা কল্পনা করা যায় না। কম্পিউটারকে ব্যবহার করা যায় সকল কাজে সকল স্থানে। মুলতঃ মানুষ তার কাজের উন্নয়নের জন্য কম্পিউটারকে কাজে লাগায়। এর ব্যবহারে প্রতিটি কাজ হয়ে পড়ে নির্ভরগতিশীলতাই দিন দিন কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়েই চলছে। নিচে কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরণের ব্যবহার উল্লেখিত হলঃ-

অফিস ব্যবস্থাপনা (In office Management)
শিল্প ক্ষেত্রে (In Industry Sector)
মুদ্রণ শিল্পে (In Printing Industry)
যোগাযোগ ব্যবস্থায় (In Communication)
চিকিৎসা ক্ষেত্রে (In Medical Sector)
গবেষণায় (In Research)
ব্যাংকিং জগতে (In Banking)
আদালত (In Court)
সামরিক ক্ষেত্রে (In Defence Sector)
অর্থবাজারে (In Billing System)
কৃষি ক্ষেত্রে (In Agriculture)
সংস্কৃতি ও বিনোদনে (In Cultures and Recreation)
তথ্য পরিসংখ্যানে (In Information Statistics)
ডিজাইনে (In Design)
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে (In Weather Forecast)

এক কথায় কম্পিউটার ব্যবহৃত হয় সর্বত্রআমাদের জীবন যাত্রা কম্পিউটার ভিত্তিকবাসার পড়ার ঘর, ভিডিও লাইব্রেরী,অফিস,ডিপার্টমেন্ট সেন্টারহোটেল থেকে শুরু’ করে সর্বক্ষেত্রে কম্পিউটার ব্যবহার দিনকে দিন অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়ে চলেছে।

Facebook Comments

Leave a Reply