0
  Login
মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হলে ইনকাম ট্যাক্স কিভাবে দিবেন?

মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার হলে ইনকাম ট্যাক্স কিভাবে দিবেন?

আমরা অনেকেই অনলাইন থেকে ইনকাম করি মুক্ত পেশাজীবী বা ফুল টাইম ফ্রিল্যান্সার হিসাবে। এখন অনেকের প্রশ্ন যে, ইনকাম ট্যাক্স দিতে হবে কিনা? আবার অনেকেই জানেন যে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনলাইন ইনকামের উপর কোন ট্যাক্স দেয়া লাগবে না। কিন্তু ট্যাক্স না দেয়া লাগ্লেও আপনাকে প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন করতে হবে, এবং এর জন্য আপনাকে কোনো প্রকার ফী/টাকা প্রদান করতে হবে না। তাই কোন চিন্তা বা ভয়ের কিছু নেই। নিন্মোক্ত স্টেপগুলো অনুকরণ করে আপনি খুব সহজেই ট্যাক্স প্রদান করতে পারবেন। আসুন জেনে নেই তার ধাপগুলো:

১। আপনি যেই মার্কেটপ্লেসে কাজ করুন না কেন যদি আপনি আপনার আয়কৃত ডলার রেমিট্যান্স হিসাবে বাংলাদেশের যেকোনো ব্যাংকে নিয়ে আসেন তাহলে আপনি খুব সহজেই ট্যাক্স প্রদান করতে পারবেন। মনে রাখবেন ফ্রিল্যান্সার হিসাবে ট্যাক্স প্রদানের জন্য অবশ্যই আপনাকে রেমিট্যান্স হিসাবে টাকা আনতে হবে।

২। আপনি যদি এই অর্থ বছরের জন্য ট্যাক্স প্রদান করতে ইচ্ছুক তাহলে আপনার জমাকৃত অর্থের একটি ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিবেন (জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০১৮) যদি একাধিক ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে থাকেন তাহলে সবকটি ব্যাংকের স্টেটমেন্ট নিতে হবে। এখন এই ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়ে ব্যাংক এশিয়ার পল্টন শাখায় চলে আসুন। এখন ব্যাংক বরাবর একটি দরখাস্ত(রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট উত্তোলন প্রসঙ্গে) লিখে উক্ত শাখার রেমিট্যান্স বিভাগে জমাদিন। এখন রেমিট্যান্স বিভাগ আপনাকে রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট প্রদানে সবরকম সহায়তা করবে এবং আপনি এক-দুই দিনের মধ্যে আপনার রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে যাবেন।

এখানে আমি ব্যাংক এশিয়াকে উদাহরণ হিসাবে বললাম কারণ আমি পেয়নিয়রের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা আনয়ন করি। আপনি অন্যভাবে আনলে বা সরাসরি আপওয়ার্ক থেকে উইথড্র টু লোকাল ব্যাংক দিলে, রিলেটেড ব্যাংক আপনাকে কি করতে হবে তা বলে দিবে রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার জন্য।

৩। রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট এর পাশাপাশি নিন্মোক্ত নথিপত্রও তৈরি রাখতে হবেঃ

i) আগের ট্যাক্স রিটার্ন কপি, যদি ইতোপূর্বে ট্যাক্স প্রদান করে থাকেন। যদি ইতোপূর্বে কখনো ট্যাক্স রিটার্ন করে না থাকেন তাহলে এই লিংক থেকে ফর্ম ডাউনলোড করে পূরণ করে নিন: http://nbr.gov.bd/form/income-tax/eng> http://nbr.gov.bd/uploads/form/94.pdf যদি ফর্ম পূরণ করতে সমস্যা হয় তাহলে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ একজনের সহায়তা নিতে পারেন বা কর সার্কেল অফিসের কর্মকর্তার সহায়তা নিতে পারেন।

ii) আপনার E-Tin এর ফটোকপি, যদি ইতোপূর্বে কখনো আপনার E-Tin তৈরি করে না থাকেন তাহলে এই লিংকে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে নিন: http://secure.incometax.gov.bd/TINHome

iii) আপনার ভোটার পরিচয়পত্রের /পাসপোর্ট এর ফটোকপি।

iv) আপনার সকল ইনভেস্টমেন্ট/বিনিয়োগের নথিপত্র (জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০১৮)।

v) যদি কোনো সম্পত্তি/ধনসম্পদ কেনা বেচা করে থাকেন তাহলে এর নথিপত্র (জুলাই ২০১৭ থেকে জুন ২০১৮)।

৪। যদি আপনার উপরোক্ত সকল নথিপত্র তৈরি হয়ে থাকে তাহলে এখন আপনাকে চলে যেতে হবে আপনার নির্ধারিত কর সার্কেলে অর্থাৎ যে সার্কেল অফিসে করদাতা তার আয়কর রিটার্ন দাখিল করে থাকেন। আপনি চাইলে কর মেলায় গিয়েও আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন।

৫। আমার এই লেখাটি কেবল তাদের জন্য যারা ফ্রীলান্সার হিসাবে আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে ইচ্ছুক। মনে রাখবেন বাংলাদেশ সরকার ২০২৪ সাল পর্যন্ত ফ্রীলান্সারদের আয় করমুক্ত হিসাবে উল্লেখ করেছে। তবে অবশ্যই আপনাকে প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হবে এবং এর জন্য আপনাকে কোনো প্রকার ফী/টাকা প্রদান করতে হবে না।

৬। যদি ইতোপূর্বে ট্যাক্স প্রদান করে থাকেন কিন্তু ফ্রীলান্সার হওয়ার পর আর কখনো দেওয়া হয়নি। যদি দিয়ে না থাকেন তাহলে বিগত বছরেরও নথিপত্র দেখাতে হবে। ভয়ের কিছু নেই এর জন্য আপনাকে কোনো জরিমানা গুনতে হবে না কারণ আপনি একজন ফ্রীলান্সার বা মুক্ত পেশাজীবী। তবে বিগত বছরের ট্যাক্স রিটার্ন না করার উপযুক্ত কারণ দেখাতে হতে পারে।

৭। আপনার আয় ট্যাক্সের আওতাধীন কিন্তু আপনি যদি আয়কর রিটার্ন দাখিল না করেন তাহলে কর সার্কেল অফিস যেকোনো সময় আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করতে পারে।

৮। আপনি যদি ফ্রীলান্সার হয়ে থাকেন এবং আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে কোনো প্রকার আয়কর রিটার্ন করতে হবে না। আপনি চাইলে ভবিষৎ উপকারের জন্য শুধুমাত্র রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে রাখতে পারেন।

পরিশেষে, যদি লেখাটি আপনার কোনো প্রকার উপকারে আসে তাহলে  সকল ফ্রীলান্সার এবং মুক্ত পেশাজীবী ভাইদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।

Facebook Comments

Leave a Reply