0
  Login
আপনার অনলাইন শপ বা স্টোর থেকে কাস্টমাররা পণ্য না কেনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ

আপনার অনলাইন শপ বা স্টোর থেকে কাস্টমাররা পণ্য না কেনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ

বেশ কিছু কারণে কাস্টমাররা একটি অনলাইন শপ হতে কেনাকাটা করতে চায় না ।

কাস্টমার আপনার কাছে সর্বোত্তম প্রোডাক্ট ও সার্ভিস আশা করে। বর্তমান সময়ের কাস্টমারদের সন্তুষ্ট করা খুব একটা সহজ ব্যাপার না। অনলাইনে এখন অনেক সুযোগ রয়েছে যাচাই বাছাই করে কেনাকাটা করার।

আপনার অনলাইন শপের সাথে অন্যদের তুলনা করার জন্য কাস্টমারদের এখন আর খুব বেশি কষ্ট করতে হয় না । তাই এক্ষেত্রে আপনার সামান্য একটি ভুল কাস্টমারদের মনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করার জন্য যথেষ্ট।

১. ভালো কাস্টমারদের পুরস্কৃত না করা

৬২% কাস্টমার চায় আপনি তাঁদের মূল্যায়ন করুন। তাঁরা দিনের পর দিন আপনার অনলাইন শপ হতে কেনাকাটা করছে, কিন্তু বিনিময়ে আপনি তাঁদের প্রশংসা বা পুরস্কৃত কোনটাই করছেন না!

আপনার প্রতিযোগীরা কিন্তু ক্রেতাদের  মূল্যায়ন করছে, ফলে আপনি কাস্টমার হারাচ্ছেন।

ধরুন, আপনি এই মুহূর্তে একজন কাস্টমার । আপনি শীতের পোশাক কিনতে চান। দুইটি অনলাইন শপ আপনার পছন্দের তালিকায় আছে, যারা একই ধরণের প্রোডাক্ট বিক্রি করছে।

একটির নাম A অন্যটির নাম B.

আজ আপনি যখন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখলেন, আপনার মোবাইলে একটা এসএমএস এসেছে যেখানে বলা হয়েছে, আপনি ইতিপূর্বে A হতে কেনাকাটা করায় শীতের পোশাক কিনলে সেটির ডেলিভারি ফ্রী।

এখন আপনি কোন অনলাইন শপটি আগে ভিজিট করবেন?

নির্দ্বিধায় বলা যায় আপনি শপ A এর কথা ভাবছেন।

 

২. কথাবার্তায় সতর্ক এবং আন্তরিক না হওয়া

সততায় সর্বোত্তম পন্থা। আপনি আপনার প্রোডাক্ট ও সার্ভিস কাস্টমারদের কাছে তুলে ধরার সময় সর্বদা সৎ থাকুন। অতিরঞ্জিত কিছু উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকাটাই শ্রেয়।

৯১% কাস্টমার এই কারনে আপনার অনলাইনশপ হতে কেনাকাটা পরিহার করে।

ধরুন,  অনলাইনে একটি প্রোডাক্ট দেখে আপনি শপ A তে ফোন দিয়ে বললেন, ভাই/আপা অনলাইনে যে রং দেখছি এটি কি বাস্তবেও এমন?

শপ A  বলল , জি হ্যাঁ, তবে ল্যাপটপ, ডেক্সটপ বা মোবাইলের স্ক্রীনে যা দেখছেন সামান্য এদিক ওদিক হতে পারে।

একই প্রশ্ন আপনি শপ B কে করলেন।

শপ B বলল, ভাই/আপা রং একদম হুবহু যা দেখছেন তাই।

শপ B হতে কেনার পর, আপনি দেখলেন রং হুবহু না, কিছু পার্থক্য আছে। শপ A এর কথাটাই সত্যি।

পরেরবার কিছু কেনার সময় কোন শপ থেকে কিনবেন?

আপনি শপ A -র কথা ভাবছেন!

কেনার পর যদি ক্রেতা দেখে আপনি যা বলেছেন তাঁর সাথে প্রোডাক্টের মিল নেই তবে সে আর কখনোই আপনার থেকে কেনাকাটা করবে না। এটা শুধুমাত্র একটি উদাহরণ। এই মূলনীতি টি আপনার বিজনেস এর যেকোনো পর্যায়ে ব্যবহার করুন । খুব দ্রুত ক্রেতার আস্থা অর্জন করতে পারবেন ।

৩. কাস্টমারদের সময়কে গুরুত্ব না দেওয়া

বর্তমান সময়ে সবাই প্রচণ্ড রকম ব্যস্ত। সময়মত প্রোডাক্ট  না পেলে স্বাভাবিক ভাবেই কাস্টমার অসন্তুষ্ট হয়।

৬৬% কাস্টমার সময়মত প্রোডাক্ট না পেলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায়।

আপনি শপ B হতে একটি প্রোডাক্ট অর্ডার করেছেন, বিক্রেতার কথা ছিল ৩ দিনের মধ্যে পৌঁছে যাবে। কিন্তু আপনি পেয়েছেন ৫ দিন পরে!

পরেরবার শপ A হতে প্রোডাক্ট অর্ডার করেছিলেন তারাও ৩ দিন সময় লাগবে বলেছিল এবং ঠিক ৩ দিনের মধ্যে আপনি প্রোডাক্ট হাতে পেয়েছেন।

যদি কারো জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকীর জন্য অনলাইনে প্রোডাক্ট অর্ডার করতে চান, তাহলে আপনি কোন অনলাইন শপটিকে বেছে নিবেন?

নিশ্চয় শপ A। আমি কি ঠিক বলেছি?

তাহলে কী হল? অনলাইন শপ B তাঁর কাস্টমার হারালো!

৪. পূর্ণ যোগাযোগের ঠিকানা উল্লেখ না থাকা

৫১% কাস্টমার দেখে অনলাইন শপটির ঠিকানা সঠিক ভাবে দেয়া আছে কি না। অনেক অনলাইন শপ শুধু একটি মোবাইল নম্বার বা একটি ইমেইল দিয়ে এই কাজটি সেরে ফেলেন।পূর্ণ ঠিকানা এবং যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম না থাকলে কাস্টমাররা একটি অনলাইন শপের উপর আস্থা পায় না ।

মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ, ইমো সহ সকল প্রকার যোগাযোগ মাধ্যম রাখা দরকার। যোগাযোগ যত সহজ হবে তত বেশি নতুন কাস্টমার পাবেন।

ধরুন, শপ A তে ঠিকানা, ফোন নম্বার, ই মেইল, মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপ, ইমো সহ সকল প্রকার যোগাযোগ মাধ্যম দেয়া আছে।

আর শপ B শুধু ফোন নম্বার ছাড়া আর কিছুই উল্লেখ করে নি।

এখন, আপনি বাসায় বসে অনলাইনে প্রোডাক্ট অর্ডার করবেন । ভাবলেন শপ B তে  কথা বলবেন প্রোডাক্টটির ব্যাপারে। কিন্তু ফোন করতে গিয়ে দেখলেন আপনার মোবাইলে ব্যাল্যান্স শেষ। আপনি পরে কথা বলবো ভাবলেন।

একই প্রোডাক্ট শপ A তে দেখতে পেলেন। আপনার ইন্টারনেট ডেটা থাকায় অনলাইনে শপ A তে কথা হল। সব ঠিক থাকায় আপনি তাঁর কাছেই প্রোডাক্ট টি কিনলেন।

মোবাইল নম্বার, ইমেইল, শোরুমের ঠিকানা, ইকমার্স ওয়েবসাইট, আপনার সার্ভিস বন্ধ ও খোলা থাকার সময় যদি সঠিক ভাবে উল্লেখ না থাকে, তবে আপনি ক্রেতা হারাবেন।

 

৫. যোগাযোগে দ্রুত সাড়া না দেওয়া

প্রোডাক্ট অনলাইনে দেখার পর যদি কাস্টমার আপনার সাথে যোগাযোগ করে, তবে একটু সহযোগিতা তাকে কেনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। এবং প্রোডাক্টটি বিক্রি হয়।

৬৬% কাস্টমার কিছু জানতে চাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর আশা করে।  

ধরুন, শপ B তে আপনি ফোন দিয়েছেন কিন্তু কেউ রিসিভ করছে না, ২ বার কল দেবার পর আপনি শপ A তে ফোন দিলেন সাথে সাথে রিসিভ করলো। আপনি তাঁদের সাথে আপনার পছন্দের প্রোডাক্ট নিয়ে কথা বললেন।

চোখ বন্ধ করে ভাবুন, দেখবেন শপ A আপনার কাছে বেশি ভালো মনে হচ্ছে।

আপনার সাথে যোগাযোগ করতে গিয়ে যদি কাস্টমার অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে বা আপনাকে সেই মুহূর্তে না পায় তবে সে অন্য বিক্রেতার দিকে নজর দেয়।

৬. কাস্টমার এর সমস্যা সমাধানে দেরি বা ব্যর্থ হওয়া

প্রোডাক্ট বিক্রয়ের পর কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে । বিক্রেতা যদি এই সমস্যা সমাধানে দেরি করে বা ব্যর্থ হয় তবে কাস্টমার হারাতে হতে পারে।

আপনি শপ A এবং B উভয়ের কাছ থেকে প্রোডাক্ট কিনেছেন। শপ A হতে কেনা প্রোডাক্টটি আপনি পরিবর্তন করতে চান তাই তাঁদের জানালেন। তাঁরা সাথে সাথে আপনার চাহিদা মত সেটি পরিবর্তন করে দিলো।

অন্যদিকে শপ B হতে কেনা প্রোডাক্টটিতে ত্রুটি থাকায় আপনি তাঁদের বললেন সেটা ফেরত নিতে। কিন্তু তাঁরা কোন সাড়া দিলো না। ১ সপ্তাহ পরে তাঁরা আপনাকে বলল প্রোডাক্টটির স্টক শেষ আসলে তাঁরা জানাবে।

কি চিন্তা করছেন? শপ B হতে আর কিনবেন কোনদিন?

উত্তর “না”

প্রশ্নের উত্তর বা প্রোডাক্ট এর জন্য অপেক্ষার সময়টি কাস্টমারদের জন্য খুব অসহনীয়।অধিকাংশ সময় বিক্রেতার উদাসীনতা কাস্টমারদের আগ্রহ নষ্ট করে।

৭. নিরাপদ অনলাইন পেমেন্ট অপশন না থাকা

অনলাইন বিজনেসে  অনলাইন পেমেন্ট অপশন থাকা মানে ক্রেতাদের আস্থা অর্জনে আপনি ৫০% এগিয়ে আছেন। অনলাইন পেমেন্ট অপশন চালু করতে একটা বিজনেস কে তার প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক কাগজপত্র ব্যাঙ্ক কে দিতে হয়। পাশাপাশি পেমেন্ট এর জন্য আপনার শপ এ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক এবং ওয়ালেট এর লোগো আপনার ব্যবসার বিশ্বস্ততা বাড়িয়ে তোলে বহুগুন।

বর্তমান সময়ে ক্রেডিট কার্ড , ভিসা কার্ড, বিকাশ , রকেট সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক অনলাইন পেমেন্ট সেবা চালু করেছে। তাঁরা নগদ টাকা লেনদেন থেকে সবাইকে উৎসাহিত করছে অনলাইন লেনদেন করতে।

অনলাইন পেমেন্টে আকর্ষণীয় ছাড়ের সুযোগ দিচ্ছে সবাই।

আপনি যদি আপনার কাস্টমারদের অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা দিতে ব্যর্থ হন ,তবে কিছু ভালো মানের কাস্টমার হারাবেন।

আপনার অনলাইন শপ এর উপর বার বার আস্থা রাখতে বলা

আস্থা অর্জন করতে হয়। আপনি যেভাবেই বলেন না কেন আপনার উপর আস্থা তৈরি হবে যদি কাস্টমার আপনার বিজনেসের অর্জন গুলা দেখতে পায়।

আপনার প্রোডাক্ট যদি ফ্যাশন আইটেম হয়, তাহলে প্রোডাক্টের কোয়ালিটি সার্টিফিকেট , যদি শোরুম বা ফ্যাক্টরি থাকে তাহলে প্রতিষ্ঠানের কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট, কোন সংগঠন হতে পাওয়া পুরুস্কার বা স্বীকৃতি কাস্টমারদের আস্থা অর্জনে দারুণ সহায়ক।

বিশ্বের নামি দামি ব্র্যান্ডগুলা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই আস্থা অর্জনের সূচনা করেছিল। আজ তাঁদের নামটাই কাস্টমারদের আস্থা অর্জনের জন্য যথেষ্ট।

পরিশেষে,

যদি চান কাস্টমাররা নিয়মিত আপনার অনলাইন শপ হতে কেনাকাটা করুক, তাহলে তাঁদের প্রতি আপনাকে যথেষ্ট যত্নবান হতে হবে। আপনার প্রোডাক্ট কোয়ালিটি, সততা এবং আন্তরিকতাই দিন শেষে কাস্টমারদের আপনার কাছ থেকে কিনতে উৎসাহিত করবে।

Facebook Comments

Leave a Reply