0
  Login
ই কমার্স বিজনেসে সফলতা পেতে আপনাকে যে কাজগুলো করতেই হবে

ই কমার্স বিজনেসে সফলতা পেতে আপনাকে যে কাজগুলো করতেই হবে

বর্তমান সময়টাই এমন যেখানে কাস্টমার কিছু কেনাকাটার চিন্তা করলেই প্রথমে অনলাইনে সার্চ করে।

ইকমার্স কনসেপ্ট বিজনেসের প্রচার ও প্রসারে একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। অতি দ্রততার সাথে এর ব্যাপক বিস্তার প্রমান করে এর প্রয়োজনীয়তা।

প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার বাজারে যদি আপনি অনলাইন বিজনেসে সফলতা চান তবে ই-কমার্সের সঠিক ব্যবহার জানতে হবে।

Statista এর জরিপ মতে, ২০১৫ সালে অনলাইন রিটেল বিজনেসের পরিমান ছিল ৩৪২.৯৬ বিলিয়ন ডলার।  ২০১৯ সালে যা বেড়ে দাড়িয়েছে ৬০০ বিলিয়ন ডলারে।

ইকমার্স বিজনেসে লেনদেনের এই সংখ্যাটিকে কোন সচেতন উদ্যোক্তা পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন না।

ই কমার্স বিজনেসে সফল হতে আপনাকে জানতে হবে এই বিজনেসের মৌলিক কিছু বিষয় যা প্রতিটি অনলাইন উদ্যোক্তাকে মোকাবেলা করতে হয়।

অনেকেই ই-কমার্স বিজনেস করছে কিন্তু সকল ই কমার্স উদ্যোক্তাই কি প্রফিট করতে পারছে?

ই কমার্স বিজনেসে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকে। ছোট বড় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যদি জানা থাকে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করতে হয় তবে ই কমার্স বিজনেস শোরুম নির্ভর বিজনেসের চেয়ে অধিক প্রফিট করা সম্ভব।

আসুন জানি, ইকমার্স বিজনেসে একজন উদ্যোক্তা প্রথম দিন থেকেই কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন এবং এই সমস্যা নিরসনে আপনি কী পদক্ষেপ নিতে পারেন  

মার্কেট পজিশনিং বা বিশেষত্ব তৈরী করা  

অনলাইন বিজনেস করতে গিয়ে আমরা একটা বড় ভুল করি – সেটা হলো অন্য আরেকজন যে প্রোডাক্ট বিক্রি করে সফল হয়েছে, সেই প্রোডাক্ট সেল করার চেষ্টা করা। অথবা কোনো প্ল্যান ছাড়াই সবকিছু সেল করার চেষ্টা করা।

Rokomari.com এর কথাই ধরুন। রকমারি কি সবকিছু সেল করে? বর্তমানে রকমারি অনেক পণ্যই সেল করে, কিন্তু তাদের বিশেষত্ব হলো বই সেল করা এবং তারা একসময় শুধু মাত্র বই-ই সেল করত ।

আরো আছে। যেমন: Styline Collection । তারাও শুরু করেছিল শুধুমাত্র হিজাব এবং বোরখা দিয়ে। এখন তারা কসমেটিক এবং অন্যান্য জিনিসও বিক্রি করে।

আপনি যে প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করছেন বা করতে চান তার মার্কেট সাইজ, মার্কেট ট্রেন্ড, সম্ভাব্য ক্রেতা, ক্রেতাদের পছন্দ ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এবং নিয়মিত আপডেট থাকুন।

শুরুতেই অনেক ধরণের প্রোডাক্ট এর পরিবর্তে যে কোনো এক ধরণের প্রোডাক্ট নিয়ে বিজনেস করুন। চেষ্টা করুন আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস এর একটি বিশেষত্ব তৈরী করতে। আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

মাল্টিপল কমিউনিকেশন চ্যানেল ব্যবহার করা 

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার পরিমাণ ৭.৭ বিলিয়ন। আর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের সংখ্যা ৩.৪৫ বিলিয়ন।

৯১% রিটেইল ব্র্যান্ড ২ টির বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। ফেসবুক ও  হোয়াটসঅ্যাপে প্রতিদিন ৬০ মিলিয়ন মেসেজ আদান প্রদান হয়। বর্তমানে মানুষ এসকল কমিউনিকেশন চ্যানেলে এতোটাই নির্ভরশীল যে বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের কাস্টমার সার্ভিসও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে দিচ্ছে।

যেমন: Eastern Bank । এই ব্যাংকের গ্রাহকরা তাদের একাউন্ট সম্পর্কিত অনেক সেবা ফেইসবুক মেসেঞ্জার এর মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। (https://www.facebook.com/ebldia/)

সোশ্যাল চ্যানেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডের সাথে কাস্টমারদের অবিচ্ছেদ্য ভাবে যুক্ত রাখে। যোগাযোগের পাশাপাশি এই চ্যানেলগুলি মার্কেটিং এর জন্যও ব্যবহার করা যায়।

তাই, একটু নজর দিন আপনার এই মুহূর্তে কোন কমিউনিকেশন চ্যানেলগুলো চালু আছে আর কোনগুলো ওপেন করতে হবে ।

মাল্টিপল কমিউনিকেশন চ্যানেল ব্যবহার প্রকাশ করে আপনি কাস্টমারদের চাহিদা বোঝেন, সামাজিক মাধ্যম নিয়ে সচেতন আর তাঁদের সকল সুবিধা প্রদানের চেষ্টা করেন।

প্রোডাক্ট রিটার্ন রেট কমানো 

অনলাইনে কেনাকাটায় অনেক সময় কাস্টমার ভুল তথ্য প্রদান করে। সঠিক ফোন নম্বর না দিয়ে বা ভুল ই-মেইল প্রদান করে কাস্টমার কেনাকাটা সম্পন্ন করে।

পরবর্তীতে তাঁর দেয়া তথ্য প্রোডাক্ট মার্কেটিং এ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।পূর্ণ তথ্য ছাড়া কাস্টমারকে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেবার সময় ডেলিভারি ম্যানকেও হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়।

অনলাইন কেনাকাটায় সাধারণত প্রোডাক্ট রিটার্ন আসার হার ৮%, কিন্তু সতর্ক না থাকলে ফ্যাশান ব্র্যান্ডের ক্ষেত্রে এটি ৩০% পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। প্রোডাক্ট রিটার্নের দুটি ভাগ রয়েছে একটি নিয়ন্ত্রণ যোগ্য অন্যটি অনিয়ন্ত্রণ যোগ্য।

কোয়ালিটি, সাইজ বা সময়মত ডেলিভারি না করতে পারা এধরনের সমস্যা নিয়ন্ত্রণযোগ্য।

কিন্তু কাস্টমারের ভুলের কারনে অর্ডার রিটার্ন আসা নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। এধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয় ভুল ঠিকানা, ভুল মোবাইল নম্বর, ভুল ইমেইল দেবার কারনে।

অধিকাংশ অনলাইন সেলার থার্ড পার্টি ডেলিভারি সার্ভিস ব্যবহার করেন । ফলে যদি একটি প্রোডাক্ট রিটার্ন আসে তবে সেটির জন্য এক্সট্রা টাকা গুনতে হয়। এতে করে অপারেশন কস্ট বৃদ্ধি পায় এবং প্রফিট কমে যায়।

ফোন ও ই-মেইল সঠিক আছে কিনা অর্ডার কনফার্ম করার সময় সেটি যাচাই করা প্রয়োজন। কাস্টমারের প্রদান করা নম্বরে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করুন, নিশ্চিত করুন দেয়া তথ্য সঠিক।এই কাজটি আপনার ওয়েবসাইটে ‘ডাটা ভ্যালিডেশন’ ব্যবহার করে খুব সহজে করা যায়। কাস্টমার যদি  ভুল তথ্য দেয় তবে সিস্টেম সেটি গ্রহন করবে না।

পূর্ণাঙ্গ তথ্য না নিয়ে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি কাস্টমারকে যদি আগেই জানাতে পারেন, কবে এবং কখন প্রোডাক্ট ডেলিভারি হবে তাহলেও আপনার প্রোডাক্ট রিটার্ন রেট অনেক কমে যাবে।

লয়াল কাস্টমার/ফলোয়ার গ্রুপ তৈরী করা

শুধু পণ্য বিক্রি করলেই হবে না, দীর্ঘ মেয়াদে বিজনেস করতে আপনাকে একটা লয়াল কাস্টমার গ্রুপ তৈরী করতে হবে ।

মানসম্মত প্রোডাক্ট ও কাস্টমার সার্ভিস নিশ্চিত হলে কাস্টমারদের মধ্যে একটি পজিটিভ মনোভাব তৈরি হয় যা তাকে সেই অনলাইন ব্র্যান্ড থেকে বারবার কিনতে উৎসাহী করে।

কেন লয়াল কাস্টমার গ্রুপ তৈরী করা জরুরি?

১. নতুন একজন কাস্টমার পাওয়ার জন্য যে খরচ হয় (customer acquisition cost) , তা বর্তমান একজন কাস্টমারকে ধরে রাখার খরচের (customer retention cost) চাইতে ৫ গুন বেশি। (সূত্র: Forrester Research)

২. আপনি যদি আপনার বর্তমান কাস্টমারদের ৫% বেশি ধরে রাখতে পারেন তাহলে আপনার প্রফিট ২৫% থেকে ৯৫% পর্যন্ত বাড়তে পারে (সূত্র: Harvard Business School)

৩. বিশ্বব্যাপী একজন কাস্টমার হারানোর (lost customer) গড় মূল্য হলো ২৪৩ ডলার। তার মানে, একজন কাস্টমার চলে গেলে একটা বিজনেস গড়ে প্রায় ২০,০০০ টাকা লস করে! (সূত্র: Kissmetrics)

লয়াল কাস্টমার গ্রুপই মূলত একটি বিজনেসকে বড় হতে সাহায্য করে। পাশাপাশি তারা আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকেও তাদের পছন্দের বিজনেস থেকে কিনতে উৎসাহিত করে।

অতএব, বুঝতেই পারছেন লয়াল কাস্টমার গ্রুপ থাকা আপনার বিজনেস এর জন্য কতটা জরুরি।

আকর্ষণীয় অফার, বিশেষ পুরস্কার, বেশি কেনাকাটায় বোনাস প্রদান, লয়াল মেম্বারদের নিয়ে রাফেল ড্র অথবা তাঁদের অনলাইন শপিংএ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেবা প্রদান – এমন অনেক উপায়ে লয়াল কাস্টমার গ্রুপ তৈরি করা যায়।

পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ 

অনলাইনে পণ্যের মূল্য নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান দেখুন যা আপনাকে পণ্যের মূল্য সম্পর্কে নতুন ভাবে ভাবতে বাধ্য করবে –

  • ৯০% কাস্টমার অনলাইনে বেস্ট ডিল খুঁজতে সময় খরচ করে ।
  • ৮৬% কাস্টমার সেলারদের অফারকৃত মূল্যে তুলনামূলক পার্থক্যকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে ।
  • ৬০% কাস্টমার অনলাইন কেনাকাটায় মূল্যকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেয় ।
  • ২৬% অনলাইন সেলার প্রোডাক্টের মূল্য নির্ধারণের জন্য প্রতিযোগী সেলারদের মূল্যকে গুরুত্ব দেয় ।
  • একজন কাস্টমার অনলাইনে কেনাকাটা সম্পন্ন করার আগে কমপক্ষে ৩ টি অনলাইন শপ ভিজিট করে।

তাই অনলাইনে পণ্যের যথাযথ মূল্য নির্ধারণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

পণ্যের মূল্য নির্ধারণের অনেক স্ট্রাটেজি আছে এবং এর সাথে আপনি কোন niche বা industry নিয়ে কাজ করছেন তার কাস্টমারদের সাইকোলজি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যেমন:

Charm Pricing, The rule of 100, cost based pricing, value based pricing, market based pricing, dynamic pricing, discount pricing, loss leader pricing এবং আরও অনেক !

Charm Pricing হলো আপনি পণ্যের প্রাইস এর শেষে ৫ অথবা ৯ রাখবেন । কোনো ইন্ডাস্ট্রি যদি খুব বেশি কম্পিটিটিভ হয় এবং কাস্টমাররা price-sensitive হয় তাহলে সাধারণত এই স্ট্রাটেজি ব্যবহার করা হয় । আমাদের দেশে মোবাইল কোম্পানি গুলো এই প্রাইসিং ব্যবহার করে।

আপনি ইন্টারনেট থেকে এই প্রাইসিং স্ট্রাটেজি গুলো জেনে নিতে পারেন ।

ফেসবুক মার্কেটিং এর বাজেট 

ইকমার্স ওয়েবসাইটে কাস্টমার আনার সব চেয়ে সহজ উপায় হলো ফেইসবুক বিজ্ঞাপন যেটাকে অনেকেই ‘বুস্টিং’ বলে থাকেন। তাই অনলাইনে বিজনেস করতে আপনাকে অবশ্যই ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে হবে।

ফেসবুক গড়ে প্রতি ০.০১ সেন্টে ১ টি ইম্প্রেশন (CPM) দেয় (সূত্রঃ Fit Small Business)। অর্থাৎ, আপনি ১০ ডলার খরচ করে ১০০০ মানুষকে রিচ করতে পারবেন। তবে আমাদের দেশে এই সংখ্যা আরো বেশি। বাংলাদেশে আপনি ১০ ডলার খরচ করে গড়ে প্রায় ৪০০০ থেকে ১০,০০০ মানুষকে রিচ করতে পারবেন।

ইন্ডাস্ট্রি, প্রোডাক্ট, বিজ্ঞাপনের ধরণ এবং কোয়ালিটি, টার্গেট মার্কেট ইত্যাদি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে এই সংখ্যা পরিবর্তন হয়।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আপনি ৫০ ডলার বাজেট করলে রিচ করবেন নূন্যতম ২০,০০০ (বিশ হাজার) মানুষ।

Wordstream এর তথ্য মতে, ফেসবুক অ্যাডের এভারেজ কনভার্সন রেট ৯.২১%।  আর Apparel, Retail, এবং Beauty Industry তে এভারেজ কনভার্সন রেট ৪.১১%, ৭.১০% ৩.২৬%।

এখন আপনি যদি অনলাইনে পোশাক বিক্রি করেন তাহলে ২০,০০০ কাস্টমারকে রিচ করলে আপনি ৮২২ জন পটেনশিয়াল কাস্টমার এনগেজ  করতে পারবেন। কনভার্সন হলেই সেল হবে এমনটা নয়, তবে এটি সেল হবার পজিটিভ সম্ভবনাকে নির্দেশ করে। যদি এই এনগেজমেন্ট হতে ১% ও সেল আসে তবে ৮-১০ টি প্রোডাক্ট অর্ডার হবে।

এখন আপনাকে হিসাব করে দেখতে হবে, আপনি যে পরিমান বাজেট করেছেন এবং যে পরিমান ROI পাচ্ছেন সেটা লাভ জনক কিনা । লাভ জনক না হলে সেটা কিভাবে লাভজনক করা যায় সেটা খুঁজে বের করতে হবে । এক্ষেত্রে প্রফেশনাল ই-কমার্স বিজনেস সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নিতে পারেন।

ফেসবুক পেইড মার্কেটিং বা বুস্টিং এ প্রথম দিকে দারুণ ফলাফল দেয় তাই প্রথম ৩ মাস বড় বাজেটের বুস্টিং ধারাবাহিক ভাবে চালানো ভালো।

পরিশেষ, 

আপনার বিজনেসকে সফল করতে যেকোনো পরামর্শ বা সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ০১৭২২৪৬১৩৩৫ অথবা এখানে ক্লিক করুন  https://allitbd.com/digital-marketing-services/

 

Leave a Reply