ইকমার্স প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির আদ্যোপান্ত – কি, কেন, কীভাবে ?
ইকমার্স বিজনেসে কাস্টমারদের নিকট প্রোডাক্ট সেল করার উদ্দেশ্যে আকর্ষণীয় উপায়ে প্রোডাক্টের ছবি তোলাই হলো ইকমার্স প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি।
সাধারণ তোলা ছবি আর ইকমার্স বিজনেসের জন্য তোলা প্রোডাক্টের ছবির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল এটির উপস্থাপনা শৈলী। আমাদের মস্তিষ্কে তথ্য প্রবাহের ৯০% দৃষ্টিলব্ধ বিষয়। তাই ইকমার্স বিজনেসে মনোযোগ আকর্ষক দৃশ্যমান কনটেন্ট হিসেবে ফটোগ্রাফির স্থান সবার প্রথমে।
প্রোডাক্টের মানসম্মত ছবি কাস্টমারদের কাছে একটি ব্র্যান্ডের গ্রহন যোগ্যতা বাড়িয়ে তোলে। জরিপে দেখা গেছে ৯৩% কাস্টমার ই কমার্স কেনাকাটায় প্রোডাক্টের ছবিকে প্রাধান্য দেয়।
প্রোডাক্টভেদে বিভিন্ন রকম ই কমার্স ফটোগ্রাফি
ই কমার্স বিজনেসে ৫ ধরনের প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির প্রচলন আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি।
এই ক্যাটাগরিতে প্রোডাক্টের খুবই সাবলীল উপস্থাপনা করা হয়। ছবির ৭৫% বাকগ্রাউন্ড সাদা থাকে। এর কারণ হলো প্রোডাক্টের সর্বোচ্চ দৃশ্যমানতা নিশ্চিত করা। কাস্টমার আর প্রোডাক্টের ফটোর মাঝে সকল মনোযোগ ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী অবজেক্ট সরিয়ে ফেলা হয়।
অ্যামাজন প্রোডাক্ট বিক্রি করতে এই টাইপের ফটোগ্রাফি বাধ্যতামূলক। অ্যামাজন এর Product only ফটোগ্রাফিগুলো দেখতে এই লিংকটিতে ক্লিক করুন ।
যে কোন প্রকার প্রোডাক্ট নিয়ে ইকমার্স বিজনেস করছেন এমন সকলের জন্য এই ফটোগ্রাফি পদ্ধতি উপযুক্ত। ডিজাইন নির্ভর প্রোডাক্ট সেলের জন্য এই ফটোগ্রাফি আদর্শ।
Lifestyle
এই ফটোগ্রাফি একটি প্রোডাক্টের ব্যবহারিক চিত্র তুলে ধরে। কাস্টমার ছবিটির ব্যবহারকারীর স্থানে নিজেকে কল্পনা করতে শুরু করে। এই ধরনের ফটোগ্রাফির মাধ্যমে প্রোডাক্টের বিশেষ বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয় যা কাস্টমারদের উৎসাহী করে সেই প্রোডাক্ট কিনতে। ছবির সাথে কাস্টমারের একটি অদৃশ্য যোগাযোগ তৈরি হয়।
লিংকে ক্লিক করে দেখে নিন কীভাবে আমাদের দেশীয় ব্র্যান্ড YELLOW তাদের ফেসবুক পেজে প্রোডাক্ট প্রমোট করতে Lifestyle ফটোগ্রাফি ব্যবহার করে।
কাদের জন্য এই ফটোগ্রাফি আদর্শ:
- পোশাক, গহনা, কসমেটিকস এবং এই ধরণের পণ্য যারা বিক্রি করেন
- ইউনিক কনসেপ্ট প্রোডাক্ট
- আলংকারিক পণ্য বা শিল্প রুচিসম্মত পণ্য
- প্রোডাক্টের জন্য এর ব্যবহারবিধি জানা গুরুত্বপূর্ণ এমন সব প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে
Hero
এই পদ্ধতিতে প্রোডাক্টকে অত্যন্ত জোরালো ভাবে উপস্থাপন করা হয়। এর আকার লাইফ স্টাইল প্রোডাক্টের ছবির থেকে সাধারণত বড় হয়। ছবির সাথে লেখা যোগ করা হয়ে থাকে।
কাদের জন্য ও কেন এই ফটোগ্রাফি আদর্শ –
- বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট সরবরাহকারী ব্যবসায়ী
- যারা তাদের ওয়েবসাইটে ভিজিটর নিয়ে আসতে চায়।
- সেলস ও মার্কেটিং- এর ইভেন্টের কাজে
- সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যানার হিসেবে
360-Degree
এই পদ্ধতিতে কাস্টমার প্রোডাক্টের একটি ছবিতেই বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে সেই প্রোডাক্ট দেখতে পায়। ছবিটি বিভিন্ন এঙ্গেলে অটোমেটিক রোটেট হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে এটি ম্যানুয়ালি রোটেট করার সুবিধাও থাকে।
এই ধরনের ছবির কনভার্সন রেট অনেক বেশি। কীভাবে করবেন সেজন্য ৩৬০ ডিগ্রি লিংকটি ভিজিট করতে পারেন।
কাদের জন্য ও কেন এই ফটোগ্রাফি আদর্শ:
- যে সকল প্রোডাক্টের প্রতিটি এঙ্গেল কেনার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে – যেমন মোবাইল ফোন।
- যে সব প্রোডাক্টের কেনার ক্ষেত্রে ডিজাইন খুব গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়। যেমন – জুতা ।
- বড় পণ্য যেমন আসবাব বা সরঞ্জাম ।
GIF or Video
এনিমেটেড প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি ছবির থেকে একটু বেশি কিছু যা প্রোডাক্টের ভিন্নতা সম্পর্কে তাৎক্ষণিক ধারণা দিতে পারে। চাইলে এটি আপনি নিজেই তৈরী করে নিতে পারেন। অনলাইনে বিভিন্ন ফ্রি টুল আছে যেগুলোর সাহায্যে আপনি এনিমেটেড প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি তৈরী করতে পারেন। এমন একটি টুল হলো: https://giphy.com
কখন এই পদ্ধতি ব্যবহার করবেন:
- প্রোডাক্টের ভিন্নতা (রং, সাইজ ইত্যাদি) তুলে ধরতে
- সরঞ্জামসমূহের মার্কেটিং-এ
- এমন প্রোডাক্ট যা কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য প্রস্তুতকৃত, কিন্তু কাস্টমার সেটি সম্পর্কে অবগত না।
প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির খরচ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেকের মধ্যে মোবাইল বা ঘরে থাকা ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে ফটোগ্রাফি সেরে ফেলার প্রবনতা থাকে। মনে হতে পারে ছবি তো ছবিই । এমনটা ভাবলে আপনি এই ওয়েবসাইটে ঘুরে আসতে পারেন।
http://bdphotographers.com/ তাদের ফটোগ্রাফির মূল্য শুরু ৫ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার পর্যন্ত।
প্রফেশনালদের ফটোগ্রাফির ধরণ এমন যেখানে একজন কাস্টমার ছবি দেখেই পছন্দের তালিকায় সেই পণ্যটিকে স্থান দিয়ে ফেলেন।
তবে আপনি মধ্যমানের ফটোগ্রাফি ৫০০ থেকে ১০০০ এর মধ্যে পেয়ে যাবেন।
দেশি কমার্স তাদের কাস্টমারদের জন্য প্রথম ৩০ টি প্রোডাক্টের ফ্রি ফটোগ্রাফি করে দেয়। আর প্রোডাক্টের ধরণভেদে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে আপনি প্রফেশনাল প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি পাবেন। (** এই সুবিধা শুধুমাত্র দেশি কমার্সের সেবা গ্রহনকারীদের জন্য।)
ঘর বসে মোবাইলে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি
প্রফেশনালদের দিয়ে প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি করাই ভালো । কিন্তু আপনার বাজেট যদি সীমিত হয়, তবে চাইলে আপনি ঘরে বসে নিজ মোবাইল দ্বারা প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি করে ফেলতে পারেন। কিভাবে করবেন সে বিষয়ে কিছু টিপস শেয়ার করছি,
টিপস ১: আপনার মোবাইল ফোনটির ক্যামেরা রেজুলেসন ভালো হতে হবে, ৮ মেগা পিক্সেলের নিচে কোনোভাবেই নামা যাবে না। ছবি তোলার সময় ফোকাস লক করে নিবেন।
টিপস ২: ট্রাইপোড ব্যবহার করবেন, এতে হাতের কাঁপুনি হলেও বা হরাইজেনটাল ও ভারটিকাল লাইন সমান থাকবে।
টিপস ৩: ন্যাচারাল লাইট অথবা আর্টিফিশিয়াল লাইট যে কোনো একটি ব্যবহার করবেন। একসাথে দুটি কখনোই নয়।
টিপস ৪: প্রোডাক্টের ছায়া যেন না পড়ে সেজন্য ন্যাচারাল লাইটের ছায়া দূর করতে Standalone Bounce Card ও আর্টিফিশিয়াল লাইটের ছায়া যেন না পড়ে তার জন্য Flashbulb Bounce Card ব্যবহার করতে পারেন।
টিপস ৫: ড্রপবক্স বা প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির জন্য বিশেষ একটি বক্সের মধ্যে ছবি তোলার সময় ব্যাকগ্রাউন্ডের ফ্লোর ও ওয়ালের জয়েন্টে একটি লাইন দেখা যায়। এটি কোন প্রকার এডিটিং ছাড়ায় দূর করতে বাঁকানো ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করতে পারেন।
টিপস ৬: কাস্টমার অনেক সময় প্রোডাক্টের খুব সরল উপস্থাপনা চায়। এক্ষেত্রে ঘরোয়া ফটোগ্রাফি অসাধারন। সাধারণ একটি সলিড সারফেসে প্রোডাক্ট রেখে জাস্ট ক্লিক করলেই হলো। কালার কারেকশন করতে পারেন তবে অতিরঞ্জিত ভাবে নয়। ভালো হয় যদি ছবিটি কোন ডিভাইস ব্যবহার করে তুলেছেন সেটি উল্লেখ করে দেন।
প্রোডাক্টের ফটোএডিটিং কাজে ব্যবহৃত কিছু ফ্রি অনলাইন অ্যাপ
অনেক সময় প্রোডাক্টের ছবি এডিটিং করার প্রয়োজন পড়ে, সেজন্য নিচের অ্যাপগুলো ব্যবহার করতে পারেন।
ডেক্সটপ অ্যাপ
ইমেজ ম্যানুপুলেশন, ফটো রিটাচ, কালার কম্বিনেশন ফরমেট কনভার্ট সকল কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
মোবাইল অ্যাপ- iOS, Android, and Windows devices
দারুণ ফিল্টার ও সহজ ফিচার নিয়ে এই ফটো এডিটর আপনার পছন্দের তালিকায় এডোবি ফটোশপের পরেই থাকবে।
মোবাইল অ্যাপ-iOS and Android devices
আর্টিস্টিক ছবির ফিল্টার দিয়ে চমৎকার ছবি তুলতে পারবেন।
মোবাইল ও ওয়েব
এটি খুবই পপুলার একটি এডিটর অ্যাপ। ব্যবহার করে দেখুন, দারুণ কাজে দিবে ।
মোবাইল ও ওয়েব- OS and Android devices
ইমেজ রিটাচ বা রিস্টোরেশন এর জন্য এটি এক কথায় অসাধারণ।
মোবাইল ও ওয়েব- OS and Android devices
সহজ ও পরিচ্ছন্ন একটি এডিটর চাইলে এটি আপনার পছন্দ হবে।
আপনার বিজনেসে কাজে লাগানোর মত কিছু ফটোগ্রাফি আইডিয়া
এগুলোর মত করে আপনার প্রোডাক্টগুলোর ফটোগ্রাফি করতে চেষ্টা করুন। কিছুদিন পরে দেখবেন আপনি নামিদামি ই কমার্স সাইটগুলোর মত প্রোডাক্টের উপস্থাপনায় পারদর্শী হয়ে গেছেন। একটি অনন্য সাধারণ প্রোডাক্ট প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির জন্য টুলস বা টেকনোলজির থেকে বেশি জরুরী তৃতীয় নয়ন বা দুর্দান্ত কল্পনা শক্তি।
ছবি তুলতে কিভাবে পোজ দিবেন
এতো গেল ইকমার্স প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফির যত কথা, কিন্তু আমরা নিজেরাও ছবি তুলতে অনেক পছন্দ করি। ছবি তোলার জন্য পোজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি ছবি ভালো বা খারাপ হয় পোজের কারনে। শিখে নিন, একটি চমৎকার ছবি তুলতে কিভাবে ক্যামেরার সামনে পোজ দিতে হয়।